ফ্রিল্যান্সিং কি? কেন? এবং শুরু করার প্রক্রিয়া?

মুক্তপেশার  ইংরেজি Freelancing, ফ্রিল্যান্স (Freelance) শব্দটি Free এবং Lance দুটি শব্দের সমান্বয়ে গঠিত। কোন নির্দিষ্ট  ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধিনে কাজ না করে স্বাধীনভাবে কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে জড়িত তাদের “মুক্তপেশাজীবী” (ইংরেজিতে: Freelancer) বলা হয়।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নঃ

  • ফ্রিল্যান্সিং কি?
  • ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিলান্স্যার, পিপল পার আওয়ার, ৯৯ডিজাইন এগুলো কি?
  • ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে কি কি কাজ করা যায়?
  • কিভাবে শুরু করবো?
  • কোথায় ভর্তি হবো?
  • মাসে কত টাকা আয় করবো?
  • টাকা কিভাবে উঠাবো?

মুক্তপেশায় কাজের ধরণঃ

মুক্তপেশা বা ফ্রিল্যান্সিং কাজের কোন শেষ নেই। কোন কাজ দিয়ে আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন তা আপনি যে কাজ পারেন সেটার উপর নির্ভর করে। ফ্রিল্যান্সিং কাজের পরিধি অনেক বেশি। সারাবিশ্বে এধরণের কর্মপদ্ধতির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা প্রতিনিয়ত যে কাজ গুলো করে যাচ্ছে তার কিছু উল্লেখ করা হলো-
 
  • গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ  ফ্রিল্যান্সিং এ  গ্রাফিক্স ডিজাইন এর চাহিদা সবার তুঙ্গে। এর মধ্যে আছে লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ব্যানার,  ফ্লায়ার ডিজাইন, ক্রিয়েটিভ আর্ট ডিরেক্টর, লেআউট ডিজাইন, ছবি সম্পাদনা, অ্যানিমেশন ইত্যাদি।
  • ওয়েব ডেভলপমেন্টঃ  ওয়েবসাইট ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবভিত্তিক সফ্‌টওয়্যার তৈরি, হোস্টিং ইত্যাদি।
  • ডিজিটাল মার্কেটিংঃ   ইন্টারনেটভিত্তিক বাজারজাতকরণ কার্যক্রম, যেমন ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে বিপণন।
  • লেখালেখি ও অনুবাদঃ ব্লগিং, নিবন্ধ , ওয়েবসাইট কন্টেন্ট, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, ছোট গল্প, প্রাপ্তবয়স্কদের গল্প এবং এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় ভাষান্তরকরণ উল্লেখযোগ্য।
  • কম্পিউটার প্রোগ্রামিংঃ ডেস্কটপ প্রোগ্রামিং থেকে ওয়েব প্রোগ্রামিং সবই এর আওতায় পড়ে।
  • সাংবাদিকতাঃ  যারা এ বিষয়ে দক্ষ তারা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় লেখালেখির, চিত্রগ্রহণের পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক জনসংযোগ করে থাকেন।
  • গ্রাহক সেবাঃ  দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির গ্রাহককে টেলিফোন, ইমেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহাজ্যে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।
  • প্রশাসনিক সহায়তাঃ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন কাজের ডাটা এন্ট্রি করণ, ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্স করা যায়।

 

আউটসোর্সিংঃ

আউটসোর্সিং বলতে কোন একটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়াকে বুঝায় । অর্থাৎ নিজের কাজ কোন একটা মাধ্যমে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়াই আউটসোর্সিং। ব্লগ লিখে আয় করা বা ইউটিউবিং করে বা অন্য উপায়ে আয় করাকে আউটসোর্সিং বলে।

সহজ কথায় আউটসোর্সিং হলো কোনো একটা মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের কাজ অন্য যখন কারো মাধ্যমে কোনো কাজ কে কোনো চুক্তির মাধ্যমে করিয়ে নেওয়া।

বিদেশি এবং দেশি ঠিকাদারি উভয় আউটসোর্সিং এর অন্তর্গত, এবং কখনো আউটসোর্সিং এ দূরবর্তী দেশে নিজের প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা পাশাপাশি কোন দেশে প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও অন্তর্ভুক্ত থাকে। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের কাজ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন মুক্ত পেশাজীবীদের কাছ থেকে ঠিকাদারী (bid) পদ্ধতিতে চুক্তিবদ্ধ করে কাজটি সমন্বয় এবং সম্পন্ন করে এবং এটা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া।

ফ্রিল্যান্সিংঃ

Freelancing কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে মু্ক্তভাবে কাজ করাকে বোঝায়। যারা এধরণের কাজ করেন তাদের বলা হয় Freelancer বলে। এধরণের কাজে যেমন কোনো নির্দিষ্ট মাসিক বেতনভাতা নেই তেমনি সবসময় কাজ পাওয়ারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে স্বাধীনমনা লোকদের আয়ের জন্য এটা একটা সুবিধাজনক পন্থা। আধুনিক যুগে বেশিরভাগ Freelancing কাজগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে মুক্ত পেশাজীবীরা ঘরে বসেই তাদের কাজ করে উপার্জন করতে পারেন। এ পেশার মাধ্যমে অনেকে প্রচলিত চাকরি থেকে বেশি আয় করে থাকেন, তবে তা আপেক্ষিক। ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ হওয়াতে এ পেশার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি হাজারো ক্লায়েন্টের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। ফ্রীল্যান্সিং একটি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া।

ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন কাজের দক্ষতা। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিরা ও এগিয়ে আসছে।
সাধারনত যেসকল কাজগুলো নিয়ে বর্তমানে ইন্টারনেটে Freelancing করে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ

লেখালেখি ও অনুবাদ: নিবন্ধ , ওয়েবসাইট কন্টেন্ট, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, ছোট গল্প, প্রাপ্তবয়স্কদের গল্প এবং এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় ভাষান্তরকরণ উল্লেখযোগ্য।

সাংবাদিকতা: যারা এবিষয়ে দক্ষ তারা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় লেখালেখির, চিত্রগ্রহণের পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক জনসংযোগ করে থাকেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন: লোগো, ওয়েবসাইট ব্যানার, ছবি সম্পাদনা, অ্যানিমেশন ইত্যাদি।

ওয়েব ডেভলপমেন্ট: ওয়েবসাইট তৈরি, ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি, হোস্টিং ইত্যাদি।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং: ডেস্কটপ প্রোগ্রামিং থেকে ওয়েব প্রোগ্রামিং সবই এর আওতায় পড়ে।

ইন্টারনেট মার্কেটিং: ইন্টারনেটভিত্তিক বাজারজাতকরণ কার্যক্রম, যেমন ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে বিপণন।

গ্রাহক সেবা: দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির গ্রাহককে টেলিফোন, ইমেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহাজ্যে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।

প্রশাসনিক সহায়তা: দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন কাজের ডাটা এন্ট্রি করণ, ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি।ইন্টারনেটভিত্তিক মুক্তপেশার চর্চায় বিশ্বব্যপী বিভিন্ন ওয়েবসাইট তাদের সেবা বিস্তৃত করেছে, এবং এসব মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের (মিডিয়া) মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ক্রেতা এবং ভোক্তা উভয়েই। এসব ওয়েবসাইটে যে-কেউ অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের কাজের বিবরণ জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন, এবং অপরপক্ষে যে-কেউ অ্যাকাউন্ট খুলে বিজ্ঞাপিত কাজের জন্য উপযুক্ত মনে করলে আবেদন করেন। এদের উভয়ের মধ্যে লেনদেনকৃত পরিমাণ অর্থের একটা অনুপাত এসকল মধ্যস্থ ব্যবসায়ী ওয়েবসাইটগুলো গ্রহণ করে, এবং এটাই তাদের মুনাফা। অনলাইনভিত্তিক এরকম কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, ফাইবার গুরু ইত্যাদি।

ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা প্রমাণের জন্য ভিবিন্ন মার্কেটপ্লেস ভিবিন্নভাবেযোগ্যতা যাচাই করে থাকে। যোগ্যোতা যাচাই করে তার কাজ করার সুযোগ দেয়। জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কে রয়েছে ৩৫০টির বেশি পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা। পরীক্ষাগুলো নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেকোনো সময় যেকোনো পরীক্ষা দেয়া যায়। বেশি বেশি পরীক্ষা দিয়ে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা তাদের প্রোফাইলকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন। প্রতিটি পরীক্ষায় ৪০টি প্রশ্ন থাকে এবং সময় থাকে ৪০ মিনিট। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বা পরিক্ষা অসম্পন্ন হলে অথবা ফেল করলে ৩০ দিনের পুর্বে আর পরিক্ষা দেওয়া যায় না।

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধাঃ

  • পূর্ন স্বাধীনতা।
  • ভালো ইনকাম এর নিশ্চয়তা।
  • নিজের পারিশ্রমিক নিজেই নির্ধারন করা।
  • ইচ্ছে মত ছুটি কাটানো।
  • পছন্দ মত কাজ করা।
  • দেশ বিদেশর নতুন নতুন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হওয়া। তাদের কৃষ্টি, কালচার এবং চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে জানার সুযোগ।

ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধাঃ

  • প্রথম কাজ পাওয়া একটু কষ্ট সাধ্য বেপার।
  • ফ্রিল্যান্সার এর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে দিন দিন মার্কেপ্লেস গুলোতে প্রতিযোগীতার হার বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং ভালো কাজ না জানলে মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ পাওয়া সম্ভব নয়।
  • ফিক্সড ক্লায়েন্ট সেট করা সময় সাপেক্ষ বেপার।
     
     

You may also like...

1 Response

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.