৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ০৩ মে, ২০১৯ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৩৪ থেকে ৩৮ বিসিএস পর্যন্ত টানা ৫ বার প্রিলি, ৩৫ থেকে ৩৭ বিসিএস পর্যন্ত টানা ৩ বার লিখিত এবং ৩ বার মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে ২ বার মেরিট পজিশন নিয়ে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার প্রাপ্তির অভিজ্ঞতার আলোকে বিসিএস যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা শেয়ার করা জরুরী বলে অনুধাবন করছি। পরামর্শ, উপদেশ কিংবা রাশভারী বক্তব্য নয় বরং ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকেই নিম্নোক্ত আলোচনাঃ
বিসিএস মানেই চরমতর ধৈর্য্যের পরীক্ষা।
- একটি বিসিএস পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে প্রায় ৩ বছর। এ সময়ের মধ্যে সব সময় ‘On Track’ এ থেকে পরিশ্রম করা মোটেও সহজ নয়। এর জন্যে প্রয়োজন অসীম আগ্রহ ও ইচ্ছা শক্তির। তবে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ৩ বছর পরিশ্রম করে প্রায় ৩০ বছর (সম্ভাব্য চাকুরীকাল) নিজ পচ্ছন্দের চাকুরীর সুমিষ্ট ফল ভোগ করবেন নাকি, এই ৩ বছর হেলা করে নিজ অপচ্ছন্দের চাকুরীর তিক্ততা কিংবা আক্ষেপ সারা জীবন ভোগ করবেন। Choice is your’s…
* জরুরী না আপনাকে বিসিএস ক্যাডার-ই হতে হবে, তবে এটা জরুরী আপনি আপনার ‘Passion’ এর প্রতি Dedicated থাকবেন। বাস্তবায়ন করবেন আপনার Inner Strength কে। So, keep dreaming & give all-out effort towards it.
* নিজ লক্ষ্য পানে পৌঁছাতে Dedication, Hardwork, Committment এই তিনটি শব্দ নিজের মাঝে ধারণ করা জরুরী। তাই, আপনার কাজে প্রচণ্ড Dedicated হউন, অন্যদের থেকে বেশি Hardwork করুন, নিজের সাথে নিজের Committment রক্ষার জন্যে যা যা করবার করুন।
* ‘মামা, চাচা কিংবা টাকা-পয়সা বা রাজনৈতিক তদবির অথবা সুনিদিষ্ট কোটা ছাড়া বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায়না’। প্রতিনিয়ত আপনার চারপাশ থেকে এমন উক্তি শুনতে শুনতে আপনার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙার উপক্রম হবে। কিন্তু, জীবন যুদ্ধে আপনি এক লড়াকু সৈনিক, আপনি হার মানবেন না। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে অবিচল থাকবেন। মনে রাখবেন, উল্লিখিত কোন সুবিধা ছাড়ায় আমি যদি দুইবার মেরিট পজিশন নিয়ে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পেতে পারি, তাহলে আপনি কেন পারবেন না? আমি বিশ্বাস করি, মেধা-মনন, অধ্যবসায় কোন অংশে আপনিও কম নয়। So keep running, never stop untill you reach your destination.
* প্রিলি পরীক্ষায় আপনি কি পড়বেন তা অনেকাংশে নির্ভর করছে আপনার কম্পিটিটররা কী পড়ছে। কেননা, আপনি কোন MCQ পারেন না সেটা সমস্যা না, সমস্যা হল সেটা অন্যে কেউ না কেউ পারছে। তাই, প্রথমেই এক্সটা-অরডিনারি হবার দরকার নেই, স্বাভাবিক/সাধারণ প্রিপারেশন আগে কমপ্লিট করুন তারপর বিশেষায়িত নলেজ নিন।
w* ‘ভাইয়া/স্যার কোচিং করব কিনা? কোচিং করলে কোনটা ভাল হবে? কোন কোচিং এর কোন টিচার ভাল? আপনি কোচিং করেছিলেন কিনা?’ ইত্যাদি গত দুই বছর আমাকে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী। উত্তরটা খুবই সিম্পল- আপনি যদি মনে করেন কোচিং ছাড়া আপনার হচ্ছে না, আপনি একা একা নিজেকে গাইড করতে পারবেন না বা আপনি নিশ্চিত যে কোচিং এর সাহায্য ছাড়া আপনার বিসিএস হবেনা। তাহলে আমার সাজেশন থাকবে আপনি অবশ্যই কোচিং করবেন। আর যদি আপনি মনে করেন, কোচিং অত্যাবwwশ্যক নয় বরং নিয়মিত সঠিকভাবে অধ্যয়নই কেবল পারে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনতে তাহলেতো প্রবলেম সল্ভড হয়েই গেল। মনে রাখবেন, ‘You & only you are the key to your success’
* ‘কোচিং এ অনেকেই ভাল করছে, মডেল টেস্টে ভাল করছে, অনেকেই কোচিং কিংবা যে কোন জায়গায় বিসিএস সংক্রান্ত বিষয়ে তোতা পাখির (!) মত অনর্গল সব বলে দিতে পারে। কিন্তু আমি কিছুই পারি না, মনে হয় তারাই খালি ক্যাডার হবে আর আমিতো প্রিলিই টিকবো না’
– Dear Warriors, মনে রাখবেন BCS Expert নয়, আপনাকে BCS Cadre হতে হবে। কোচিং এর বেস্ট পারফর্মারও অনেক সময় প্রিলিই টিকে না, অন্য দিকে যার কথা কেউ কখনো ভাবিনি সেই মেরিট পজিশন নিয়ে হয়ত চূড়ান্ত বিজয় আনতে পারে। So, don’t go against yourself. Co-operate you & energize yourself for the final battle.
যে প্রশ্নটাই সর্বাধিকবার শূনেছিঃ
* আরও কিছু প্রশ্ন যেটির উত্তর অনেকবার দিতে হয়েছে তা হল- ‘ভাইয়া/স্যার আপনি কত ঘন্টা পড়তেন? কিভাবে পড়তেন? কত ঘন্টা ঘুমাতেন?’
উত্তরঃ সবার ব্রেইনের ক্যাপাসিটি কিংবা পড়াশুনার এপ্রোচ এক নয়। কেউ ৫ ঘন্টা পড়ে যা হয় কারো সেটাতে ৫ দিন লাগে। সুতারং, আপনার ধারণ ক্ষমতা আর ব্রেইনের রিসিভিং ক্যাপাসিটি অনুযায়ী আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে আপনি কত ঘন্টা পড়বেন। তবে, আমার পরামর্শ থাকবে আপনি দৈনিক অল্প হলেও পড়াশুনা করবেন। টেবিলে সময় দিবেন। তবে ২ দিন পড়া হয়নি বলে আরও ২ দিন নষ্ট করা সেটাও কাম্য নয়। প্রতি মুহূর্তেই নতুন করে শুরু করুন। রি-এনারজেটিক থাকার ট্রাই করুন। সাফল্য আসবেই।
* ‘আমি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে/প্রাইভেটে পড়েছি/পড়ছি আমার কী বিসিএস হবে’
– হ্যা অবশ্যই হবে। প্রিলি পরীক্ষা, রিটেনে হ্যান্ডসাম মার্কস এবং ভাইভাতে নিজের বেস্টটা দিয়ে আসলে আপনি যেই ইন্সটিটিউশন থেকেই পড়ে আসেননা কেন, মহান আল্লাহ্ চাইলে বিসিএস আপনার হবেই। এছাড়াও অতীত ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কিংবা প্রাইভেট থেকেও অনেকেই বিসিএস এর চূড়ান্ত মেধাতালিকায় টপ টেনে ছিল। পক্ষান্তরে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েও কখনই প্রিলি টিকেনি এমন উদাহরণও নিতান্ত কম নয়!
* সর্বোপরি, ক্যাডার নয় মানবিক মানুষ হওয়া বেশী জরুরী। ক্যাডার না হলেও আপনার জীবন চলবে কিন্তু মানবিকতা না থাকলে জীবনের বাহ্যিক অস্তিত্ব থাকলেও প্রকৃত অর্থে হবে তা হবে মূল্যহীন ও নীতি বিবর্জিত।