Site icon স্যাট একাডেমী ব্লগ

মাইগ্রেন হলে কী করবেন

মাঝে মাঝে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা। মেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সে এই রোগের শুরু হয়।

মাইগ্রেন কী
মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যেকোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে তা বিস্তৃত আকার ধারণ করে। মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে, সেগুলো মাথাব্যথার প্রারম্ভে স্ফীত হয়ে ফুলে যায়। মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে বমি এবং বমি বমি ভাব। এতে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়, দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ প্রভৃতি কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। মনে রাখতে হবে, মাইগ্রেন একধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। চিকিৎসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা উচিত।’ মাইগ্রেনের ব্যথা চোখের কোনো সমস্যার জন্য হয় না বলেও জানালেন তিনি।

কেন এবং কাদের বেশি হয়
মাইগ্রেন কেন হয়, তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। পুরুষ ও নারীদের এই অনুপাত ১: ৫। চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগকে ত্বরান্বিত করে।

লক্ষণ
মাইগ্রেন বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু হয় এবং মাঝ বয়স পর্যন্ত কিছুদিন বা কয়েক মাস পরপর হতে পারে। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথা, বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তিবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যেকোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। শব্দ ও আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় মাথাব্যথা বেড়ে যায়।

মাইগ্রেন থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু উপায়

*মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
*প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত।
*অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
*কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।
*উচ্চ শব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
*বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
*মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।

যেসব খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে

*ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
*বিভিন্ন ফল বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
*সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
*ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
*আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিনজার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন

*চা, কফি ও কোমলপানীয়
*চকলেট, আইসক্রিম, দই
*দুধ, মাখন
*টমেটো ও টকজাতীয় ফল খাবেন না
*গমজাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
*আপেল, কলা ও চিনাবাদাম
*পেঁয়াজ
তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একটা ডায়েরি রাখা। যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেন। ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখাঃ কনক দেবনাথ