কম্পিউটার ল্যাপটপ মোবাইল নিরাপত্তায় এন্টিভাইরাস কতটা জরুরী। শেয়ার করে সবার উপকার করবো।
এন্টিভাইরাস নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন যেমন সেদিন একজন বলছে গত দুই বছর আমি কোনো এন্টিভাইরাসই ব্যবহার করিনা, কই, আমার পিসির তো কোন সমস্যাই হয়নি । আবার সেদিন একজন বলছে,ভাই আমার পিসির এন্টিভাইরাসের ডেট শেষ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করেন ভাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম আমার পিসিতে কখন ভাইরাসে খাইয়া ফালায় ! অন্যদিকে আবার অনেকের মুখেই শুনি ভাই অমুক কোম্পানির এন্টিভাইরাস খুব ভালো আর অমুকেরটা পুরাই ফালতু, ভাইরাস তো ধরতেই পারে না বরং ভালো ফাইল খাইয়া ফালায় ।
উপরের কথাগুলোর উত্তর আশা রাখি আপনারাই দিতে পারবেন পুরা লেখাটা পড়ার পর, তো যাইহোক এন্টিভাইরাস আসলেই দরকার কিনা অথবা পৃথিবীর সব এন্টিভাইরাস একই রকম কিনা, এসবের উত্তর খুজার আগে চলুন কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে একটু জেনে আসি।
ভাইরাস হলো কম্পিউটারের জন্য এমন একটি বাজে বা খারাপ প্রোগ্রাম, যে নিজেই নিজেকে কপি করে অন্য একটা ভালো প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত হতে পারে শুধু তাই নয় এই ব্যাটা একটা ভালো সফটওয়্যারকে নষ্ট করে ফেলতে পারে নিমিষেই পাশাপাশি নিজেকে এমনভাবে পরিবর্তন করে যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে ।
আপনাকে সর্বস্যহারা করতে মানে আপনার ক্রেডিট কার্ড নম্বর বা আপনার পিসির গুরত্বপূর্ণ ডাটা চুরি করতে হ্যাকাররা এই সব ভাইরাস ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন লোভনীয় মেইলের মাধ্যমে অথবা ইন্টারনেট ব্রাউসিংয়ের সময় অনেক সময় ভেসে আসে ‘ঘরে বসে ইন্টারনেটে আয় করুন বা আজে বাজে কিছু ছবি’ আর সেটাতে আপনি প্রলোভিত হয়ে ক্লিক করা মাত্রই সে আপনার ঘরে ঢুকে পড়ে ।
চলুন এবার দেখি আসি ওই ব্যাটা এন্টিভাইরাসের কি খবর, তার আগে একবার চিন্তা করুন, যদি আপনার বাসা হয় একটা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক এবং আপনার বাসার সব আসবাবপত্র, জামা-কাপড়, চাউলের বাক্স ইত্যাদি হয় এক একটা ফাইল তাহলে আপনার বাসার ইদুর বা তেলাপোকাকে ভাইরাস বলাটা বোধহয় ভুল হয় না বৈকি। তাহলে এন্টিভাইরাস কে, এন্টিভাইরাস হইলো আপনার বাসার পোষা বিরাল ছানাটা।
এখন একথা আমরা নির্দিধায় বলতে পারি, এন্টিভাইরাস হলো আপনার কম্পিউটারের আনাচে-কানাচে, চিপায়-চাপায় পড়ে থাকা সব ফাইলগুলোকে স্ক্যান করে, যদি সে ভাইরাস খুঁজে পায় তাহলে সেটাকে ইলিমিনেট করে। এখন প্রশ্ন হলো সে এটা কিভাবে করে ? বিশ্বের অধিকাংশ এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিচের দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে-
১. ভাইরাস ডিকশনারী ব্যবহার করে
২. কোনো প্রোগ্রামের আচার-আচরন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে
চলুন এবার বিস্তারিত জানা যাক-
১. ভাইরাস ডিকশনারী ব্যবহার করে
মানুষের যেমন সিগনেচার থাকে তাকে ভেরিফাই করার জন্য তেমনি কম্পিউটারে ব্যবহৃত সব কিছুরই সিগনেচার তৈরি করা যায় তাকে ভেরিফাই করার জন্য এটাকে বলা হয় হ্যাশ ভ্যালু। তো এন্টিভাইরাস ডেভেলপাররা প্রতিটি চেনা ভাইরাসের সিগনেচার বা হ্যাশ ভ্যালু তৈরি করে এন্টিভাইরাস ডাটাবেজে জমা রাখে যেটাকে বলে লোকাল ডাটাবেজ বা ভাইরাস ডিকশনারী এটা আপনার পিসিতে এন্টিভাইরাস ইনস্টল করার সাথে সাথে তৈরি হয়। কেউ যখন কোনো একটা ফাইল ওপেন বা ক্লোজ করে বা মেইলে কোনো ফাইল এটাচ করে অথবা ম্যানুয়ালি ভাইরাস স্ক্যান করে এন্টিভাইরাস তখন ওই ফাইলটাকে সে তার লোকাল ডাটাবেসের সাথে কমপেয়ার করে যখনই সিগনেচার মিলে যায় তখন সে সেটাকে ভাইরাস হিসেবে ধরে তারপর এন্টিভাইরাস হয় সেটাকে ডিলিট করে অথবা অন্যান্য ফাইলের সাথে যাতে যুক্ত না হতে পারে সেই ব্যবস্থা করে।
এখন প্রশ্ন হলো নতুন কোনো ভাইরাস সে কিভাবে চিনে নাকি চিনেই না, উত্তর হলো না চিনে না, আবারও প্রশ্ন থেকেই যায়, তাহলে ?
নতুন কোনো ভাইরাস আসলে এন্টিভাইরাস কোম্পানিগুলো তাদের ম্যালওয়ার ল্যাবে সেই ভাইরাসের সিগনেচার তৈরি করে তাদের পাবলিক ডাটাবেসে রেখে দেয় আপনার পিসি অনলাইনে আসা মাত্রই আপনার পিসির মানে এন্টিভাইরাসের লোকাল ডাটাবেসের সাথে সিন্ক্রনাইজ করে আপডেট হয়।
২. কোনো প্রোগ্রামের আচার-আচরন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে
একদম নতুন ভাইরাস ধরার ক্ষেত্রে মানে ভাইরাস ডিকশনারী যেখানে কাজ করে না সেই ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটা অনেক বেশি কাজের। বিস্তারিত বলছি তার আগে একবার হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কথা চিন্তা করুন, তার কাছে কোনো রোগী গেলে রোগ নির্ণয় করতে দুনিয়ার সব জিজ্ঞাসাবাদ করে যেমন আপনার শীত ভালো লাগে নাকি গ্রীষ্ব, পূর্নিমা না অমাবস্যা, রাতে আপনি চিত হয়ে ঘুমান না উপর হয়ে ইত্যাদি সব আচার-আচরণের কথা তেমনি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার প্রতিটি প্রোগ্রামের আচার-আচরন পর্যবেক্ষণ করে যেমন যদি সে দেখে কোনো একটা প্রোগ্রাম অন্য একটা সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামের .exe ফাইলের সাথে যুক্ত হতে চেষ্টা করছে তখন তাকে ভাইরাস হিসেবে ধরে যদিও এই পদ্ধতিতে ১০০% ভাইরাস আইডেনটিফাই করা টাফ।
মজার ব্যাপার হলো অনেকেই বলে থাকে ‘আমার ভালো ফাইল ভাইরাস খেয়ে ফেলছে’ এই ক্ষেত্রে এন্টিভাইরাস আসলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাইরাস ধরতে।