ছোটগল্প:
আয়শীর একবার মনে হইল আমাকেই সাদি করিবে আমার সাথেই বাদবাকী জীবনটা কাটাইয়া দিবে। আরেকবার মনে হইলো আমাকে বলিবে, আমাকে ক্ষমা কর,আমি পারিবনা আমার পিতৃকুলের ইচ্ছার বাহিরে কিছু করিতে…।
অনেকক্ষণ মৌন থাকিয়া ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, আমি তোমার সাথে যাইবো না…., তুমি তোমার পছন্দের অন্য কাউকে কে নিয়ে জগতসংসারে সুখি হও এই কামনা করি বলিয়া ছোট্ট এক শিশি থেকে কি যেনো পান করিয়া মুহুর্তেই অজ্ঞান হইয়া গেল…….।
আমি হতভম্ব হইয়া তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিলাম..জোড়ে চিৎকার করিতে চাহিয়া ও সামান্য শব্দ করিতে পারিলাম না।ক্ষানিক পরেই তার মুখ লুটাইয়া দেহ নিথর হইয়া গেলো।
পৃথিবী মাথার উপড়ে ঘুরিতেছে বুজিতে পারিলাম আপনা আপনি চোখদুটু বন্ধ হইয়া গেলে আমি আর কিছু মনে করিতে পারিলাম না। আমার হুস ফিরিলে চোখ খুলিয়া দেখিলাম হাসপাতেলের বিছানায় আমি, বিছানার চারপাশে আমার আত্নীয়রা কী যেন বলাবলি করিতেছে.. আমার মাথায় আয়শী হাত বুলাচ্ছে… খুশিতে তাহার চোখের একফোটা জল আমার কপালে পড়িয়া গেল..
আয়শী বেচে আছে বুজিতে পারিলাম.. বিছানা থেকে উঠিতে মনে চাইলো না। বারবার কল্পনা করিতে থাকিলাম আয়শীর চোখে চোখ রাখিয়া আমি সন্তর্পনে এক সস্তির সহিত শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করিয়া এই ধরনী ত্যাগ করিলে আমার আত্না মরিলে ও শান্তি পাইবে..
আয়শী আমার চক্ষুপানে তাকাইয়া প্রগাঢ় আনমনে সন্তর্পনে কি যেনো ভাবিতেছে..চোখ দুটি আমার বুজিয়া আসিতেছিলো…আয়শীর চিন্তাচক্ষু দেখিয়া আমিও চিন্তায় মগ্ন হইয়া গেলাম।
প্রকান্ড খেজুরবাগানের আমাদমাদের ছোটাছুটির দৃশ্য ভাষিয়া উঠিলো,আয়শীর সাথে কথোপথোনের সুর আমার কানে বাজিতে লাগিলো… চিৎকার চেচামেচি..আড্ডা আর অনুরোধের কথা আমার বেশি বেশি মনে পড়িতে লাগিলো……..।
আয়শীর চিন্তা দুরিভূত হইলে আমায় ডাক দিতেই আমি উঠিয়া বসিলাম..
আত্নীয় স্বজনের সংখ্যা পূর্বের চেয়ে বেশি উপস্থিতি টের পাহিয়া আমি স্বাভাবিক থাকার ভান করিলাম।
চিন্তার উদ্দ্যেগটা ক্রমশ বাড়িয়া চলিয়াছে।
আমার সুস্থ্যতা নিয়া সকলের মনে কেমন যানি একক সন্দেহ অনুভব করিলাম.. আমি কেমন করিয়া অসুস্থ্য হইলাম তাহা কি সকলে জানিয়া ফেলিয়াছে?
নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিলাম..জানিবেনা কেন?
কিন্তু অসুস্থ্য আয়শীকে দিব্যি সুস্থ্য মনে হইতেছে , সকল চিন্তার অবশান ঘটাইয়া আয়শীকে বলিলাম তোমার কি মনে আছে খেজুরবাগানের আড্ডা আর কত লুকোচুরির খেলা?
এই কথা শুনিয়া উপ্সথিত সবাই ভাবিলো এবার বুজি আমার মাথাটাই গেলো। কিন্তু একমাত্র আয়শীই বুঝিলো তাকে হারানোর ভয়েই আমার এত সব দুরবস্থা..।আয়শী কাছে ডাকিয়া কিছু বলিবো বালিয়া মনোস্থির করিলাম..আয়শী মুখভেঞ্চাইয়া কি বুজাইলো বুজিতে পারিলাম না.।অবশেষে আমি যাহা বুঝিবার বুঝিয়া লইলাম..পাঠকগনকে তাহা বুজাইবার প্রয়োজন মনে করি না।
আয়শীকে রাখিয়া একেক করিয়া সকলের প্রস্থান করিলো।নির্জনে আয়শীকে পাইয়া..মনের ক্ষুদ্রান্তে লুকায়িত অভিব্যাক্তিগুলো প্রকাশ করিব ভাবিয়া দুশ্চিন্তায় পড়িয়া গেলাম।চিন্তার অবসান ঘটাইয়া.. আয়শীকে বলিলাম.
আয়শী…………………….
আয়শী আমার কথা শুনিবার লক্ষ্যে উদ্দেগ হইয়া পড়িলো। আমি বলিতে লাগিলাম আমার এতদিনের অব্যাক্ত কথাগুলো……….। আয়শীর হাতখানা ধরিয়া শীতল অনুভব করিলাম… আয়শীর ছলছল আখিদ্বয়ের উষ্ম জ্বল এবার আর গড়াইয়া.. পড়িল না টপ টপ করিয়া পাড়িলো।
আমি বুজিতে পারিলাম না কি এমন বলিলাম , যাহার বদৌলতে রক্তচক্ষু সাথে চক্ষুজল দেখিতে হইলো, নার্স দরজায় আসিয়া কড়া নাড়িলো আমার রক্তচাপ মাপিয়া চমকাইয়া উঠিলো।পকেট থেকে খুদ্র একটা কাগজ বাহির করিয়া একটা ঔষধের নাম লিখিয়া আয়শীর হাতে দিয়া বলিল যত তাড়াতড়ি সম্ভব খাওয়াইয়া দিবেন।
আয়শি একমুহুর্ত ও দেরী না করিয়া ঔষধ আনিয়া আমাকে খাওইয়াইয়া দিলো। ক্রমশ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো আয়শী বারান্দার জানালায় দুরপানে তাকাইয়া দাড়াইয়া থকিলো আমি তাহার লম্বা কেশগুলুর শ্রী দেখিয়া মুগ্ধ হইলাম…।
আয়শীর বিষক্রিয়ার নির্মুল হইয়াছে বটে আমার অসুস্থতা বাড়িয়া চলিয়াছে। আমি নিজেকে সুস্থ ভাবি। কিন্তু ডাক্তার মশাই দৈনন্দিনের ঔষদের মাত্রা বাড়াইয়া চলিল। বেশ কয়েকদিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিলাম।
কিছুদিন অতিবাহিত হইতেই বুজিতে পারিলাম আত্নীয়স্বজনরা আমার বিবাহের জন্য পাত্রী খুজিতে থাকিলো। দূর সম্পর্কের বৃদ্ধ প্রতিবেশীরা আমার সাথে মসকারা আরম্ভ করিলো, আমার পছন্দ জানিতে চাহিলো…আমি মনে মনে আয়শী কে চিন্তা করিয়া পছন্দ বলিতে লাগিলাম, এমন এক শর্ত জুড়িয়া দিলাম যাহা সারাগ্রামে আয়শী ব্যাতিত অন্য কারো সাথে মিলবে না…।
আয়শী যখনই পুনরায় আমাকে দেখিতে আসিল তখন সকলেই বুজিতে পারিলো আমি কোন মেয়ের কথা ইঙ্গিত করিয়াছিলাম। আয়শী চলিয়া গেলে দূর সম্পর্কের দাদীমা আমায় নির্জনে লইয়া আয়শীর কথা বলিতে লাগিল, আয়শীকে ভুলিয়া যাইতে পরামর্শ দিতে থাকিল। আমি প্রকাশ্যে বলিয়া দিলাম আয়শীকে ব্যাতিত অন্য কাউকে বিবাহ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নাই,……।
আয়শীকে নিয়ে বিবাহের স্বপ্ন দেখিলে কি হইবে আয়শীর বাবা মা আমার কাছে বিবাহ দিতে কখনই রাজি হইবে না, আয়শীকে এবার বলিলাম তাহার বাবা মাকে ছাড়িয়া একেবারে আমার সাথে চলে আসিতে, আয়শী হাঊমাঊ করিয়া কাদিয়া ফেলিলো।
পরদিন সকালেই শুনিতে পাইলাম আয়শীর হৃদযন্ত্র বন্ধ হইবার উপক্রম হইয়া লাইফ সাপোর্টে আছে, আমি তাতক্ষনিক আয়শির মুখখানা দেখিতে চলিয়া গেলাম, কিন্তু আয়শীকে দেখিতে পাইলাম , নড়াচড়াহীন নিথর দেহে চোখদুটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমাকে বাহির করিয়া দেওয়া হইলো, আমি বাহিরে অপেক্ষা করিতে থাকিলাম, ডাক্তার বাবুর মুখে ও দুশ্চিন্তার ছাপ। আয়শিকে বুঝি বাঁচানো যাবে না ভাবিতেই আমার সর্বশরীর ঘর্দমাক্ত হইয়া গেল, কিছুক্ষন পরে হাঊমাঊ কান্নার শব্দ পাইয়া বুজিতে পারিলামা আয়শি আর বেঁচে নাই। সিড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি মাথা গুড়িয়ে আমি নিচে পড়ে গেলাম । গড়াইয়া নিচে পড়িতে পড়িতে অজ্ঞান হইয়া গেলাম।
এবার জ্ঞান ফিরিলে আয়শীকে দেখিতে পাইলাম না। জানিতে পারিলাম গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার ঠাই হয়েছে। সে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত থাকুক, হয়ত সেখানেই সুখ অনুভব করিয়াছে, মনের অভিমানে নিজকে অপরাধী ভাবিতে থাকিলাম, তাহার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলোর ভিডিওচিত্রের মত দেখিতে লাগিলাম .. কবরের পাশে গিয়ে দেখিলাম ।
তিনদিনেই ঘাষ গজাইতে শুরু করিয়াছে,…। যতটুকু পারিলাম তাহার আত্নার মাগফেরাত কামনা করিয়া দোয়া প্রার্থনা করিলাম…আজ দুই যুগ অতিবাহিত হইয়া গেলো আয়শীকে পুর্বের মতই অনুভব করি, জীবনের প্রয়োজনে সাংসারিক জীবন অতিবাহিত করিলাম বটে কিন্তু মনের খোরাক অপূর্ণই থাকিয়া গেল,
প্রতি রাতেই আমার কথা হয় আয়শীর সাথে… কিন্তু রক্তেমাংশে আয়শীকে আর কোনদিনই পাব না । অপ্রিয় এই সত্যটা যেনো আয়শীকেই মনে স্থান দিয়েছি!
আয়শীকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি,আজো মনে পড়ে আয়শীর শেষ দেখা চেহারা,কতই সাদামাটা নিষ্পাপ লেগেছিল সেদিন তাকে..।
প্রায়সই আনন্দে আবেগআপ্লুত হইয়া উঠি কারন আয়শীর আত্না আমার আত্নার সাথে চিরমিশ্রিত,স্রষ্টা ব্যাতির অন্য কেহ জানে না আমার আত্না আয়শির আত্নার সাথে মিশ্রিত হইবার যোগ্যতা রাখিয়াছে কিনা……
Related