পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্যময়ী বই “দি ভয়ানিচ মানসস্ক্রিপ্ট
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্যময়ী বই “দি ভয়ানিচ মানসস্ক্রিপ্ট”।
১০ সেপ্টেম্বর ১৯১২ ক্রিস্টাব্দে পোল্যান্ডের একজন বড় ব্যাবসায়ী আলফ্রেড ভয়ানিচ প্রথম এই বইটি উদ্ধার করেন (কোনো এক জায়গা থেকে)। সেই সময় এটি এমন একটি বই ছিল যা দিয়ে হয়তো পৃথিবীর অনেক অজানা আবিষ্কার উদ্ধার করা সম্ভব হবে অথবা নিজেই অজানা এক রহস্য হয়ে দাঁড়াবে।
এই বইটিতে এমন কিছু ইঙ্গিত দেয়া আছে যা দেখে অনুমান করা হয়েছে, বইটি অনাবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এখানে আমাদের পৃথিবীর প্রধান জিনিসগুলি যেমন, জীবনের জন্ম, গ্রহ-নক্ষেত্র, চিকিত্সাবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান ইত্যাদি তথ্যগুলি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এই তথ্যগুলি কিছু বিচিত্র ভাষার সাংকেতিক রূপে ছিল।
এমন প্রাচীন বইগুলিতে বিচিত্র সাংকেতিক ভাষার লেখা পাওয়া নতুন কোনো বিষয় ছিল না। ক্রিপ্টোগ্রাফাররা এই ধরণের কাজ প্রায় করে থাকেন, যা এমন পুরাতন বইগুলিতে খুঁজে পাওয়া ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। এই বইটি সুন্দর আর উজ্জ্বল ছবিগুলির সাথে খুব পরিপাটি ছিল। কিন্তু একটি জিনিস যা কেউ বুঝতে পারছিল না, বইটি এমন এক অক্ষরগুলি দিয়ে লিখা হয়েছে যা কখনোই আগে দেখা যায় নাই আর খুব বিচিত্র। অদ্ভূত প্রকারের চিহ্ন এবং ভাষা যেটা বোঝার জন্য ভয়ানিচ নিজের চিরজীবন অতিবাহিত করেছেন কিন্তু তিনি বইটির একটি অক্ষর বোঝতে পারেন নাই।
আলফ্রেড ভয়ানিচের মৃত্যুর পর বইটি এল বিশ্ববিদ্যায়লয়ের বাইনিকের মূল্যবান লাইব্রেরির এক গুপ্ত জায়গায় রাখা হয়। ওখানে অনেক বিশেজ্ঞরা চেষ্টা করেছেন বইটির গোপন রহস্য উন্নোচন করার। ১০ লাখের বেশি ছবির ব্যাখ্যা, ১.৭০ লাখের বেশি ক্যারেক্টার দিয়ে ভরে রাখা এই বই তাদের সব চেষ্টাই ধুলিৎসাধ করে দিয়েছে। প্রথম দেখায় সবার মনে হয়েছিল বইটি ডিকোড করা খুব একটা কঠিন হবে না, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে তাদের ধারণা কতটা ভুল।
বইটিতে কিছু ফুলের ছবি আছে, জোডিয়াক চার্ট আছে, আর যা কিছু ছবি আছে তা প্রাকৃতিক আকারের সঙ্গে মিলে যায়। আর মধ্য কিছু ছবি অপটিক্যাল ইলুশনের কাজ করে, যখনি একে গতি দেয়া যায় এটি একটি চলমান ভিডিওর মতো কাজ করে। আরো কিছু ছবি আছে যেখানে মেয়েরা বিশেষ কিছু তরলের মধ্য চান করছে, হয়তো তাতে প্রাকৃতিকভাবে চির সৌন্দর্য পাবে। তাছাড়া অন্যকিছু ছবিতে ঔষুধপত্র কিভাবে কাটতে হয় তার ব্যাখ্যা দেয়া আছে। এসবকিছু দেখে যেকোনো সাধারণ মানুষের মনে হবে এটি একটি বিজ্ঞান বিষয়ক বই।
তবে এই বইয়ের লেখক কি চিকিৎসাবিজ্ঞানের কিছু গুপ্ত আবিষ্কার সারা পৃথিবী থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলো। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বইটির লেখক কে ছিল ? এই প্রশ্নের উত্তর আলফ্রেড ভয়ানিচ নিজেই খুঁজতে চেয়েছেন। একদিন তিনি বইটি অধ্যায়ন করার সময় আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নির মাধ্যমে কিছু লেখা দেখতে পেলেন, যেটি খালি চোখে দেখা যাচ্ছিল না। বইটির প্রথম পৃষ্টায় পাওয়া লেখাটি ছিল “জ্যাকবস সিন্যাপিউস”। জ্যাকবস সিন্যাপিউস ১৭ শতাব্দীর চেক রিপাব্লিকের রাজা “২য় রুডলফ” এর ব্যাক্তিগত ডাক্তার ছিলেন। ওই সময় চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিকাশসাধন শুরু হয়েছিল, যাকে বলা হতো আলকেমি। এটা খুবই গোপন বিষয় ছিল, আর সে সময় পাওয়া যাওয়া জিনিসগুলি দুনিয়া থেকে লুকিয়ে রাখা হতো। তবে কি সত্যিই জ্যাকবস সিন্যাপিউস এই বইয়ের লেখক ছিলেন।
তবে গবেষকদের এটা কখনোই মনে হয়নি, কারণ ১৭ শতাব্দীতে গাছপালা বিষয়ক এনাটমি বিদ্যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা আমরা আবিষ্কার করেছিলাম। আর এই বইটিতে যে ধরণের গাছপালার ছবি এবং তার ব্যাখ্যা দেওয়া আছে তা আমাদের কাছে খুব পুরনো লাগছিল। এতেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল হয়তো জ্যাকবস সিন্যাপিউস এই বইটির লেখক ছিলেন না কিন্তু তিনি এই বইটির নিজের কাছে অবশ্যই রেখেছিলেন। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এই বইটি থেকে পাওয়া গিয়েছে, তা হচ্ছে ১৬৬৫ ক্রিস্টাব্দে লেখা একটি পত্র। পত্রটি লিখেছিলেন পোহিনিয়ান বিজ্ঞানী “জোহানেস মার্কাস মার্সি”, তিনি এমন একজন বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি প্রায় পৃথিবীর সমস্ত ভাষা জানতেন। বইটি তার কাছে পাঠানো হয়েছিল অনুবাদ করার জন্য। ওই পত্রটিতে বইটির লেখকের নাম বলা হয়েছিল “রজার বেকন”। রজার বেকন ১৩ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের একজন ধর্মযাজক ছিলেন। কিন্তু তিনি বিজ্ঞান দ্বারা আকর্ষিত ছিলেন। অনুমান করা হয় ওনার জ্ঞান সেই সময়কালের বিজ্ঞানীদের চেয়ে বেশি বিকশিত ছিল। এই জন্যই চার্জ তাকে অনেকবার জেলের মধ্য বন্দি করে রেখেছেন। রংধনু কিভাবে তৈয়ারি হয়, আলো কিভাবে প্ৰতিফলিত হয় এসবের ব্যাখ্যা তিনি লিখেছিলেন। আর ওই সময় তিনি একটি হালকা ক্ষমতাযুক্ত মাইক্রোস্ক্রপও বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে না যে দি ভয়ানিচ মানসস্ক্রিপ্ট বইটিতেও এমন অনেক চিত্র ছিল যা মাইক্রোস্ক্রপ দিয়ে দেখা যেত। এই কারণেই সম্ভবত তিনি তার আবিষ্কারকে এমন ভাবে এক গোপন শব্দগুলির মাধ্যমে লুকিয়ে রেখেছেন যাতে চার্জ এর উঁচু মানের ধর্মযাজকরা এটা সম্পর্কে কখনোই জানতে না পারে। বিজ্ঞানী “রিচার্ড সান্তা কলোমা” বইটির উপর অনেক গবেষণা করেছেন। তিনি মানেন যে, বইটিতে যে ধরণের মাইক্রোস্ক্রপ প্রয়োগ করা আছে তা কেবল ১৭ শতাব্দীতে তৈয়ারি মাইক্রোস্ক্রপ দিয়েই সম্ভব। তবে কোনো প্রশ্নই উঠে না যে বইটির ছবি অঙ্কন করতে মাইক্রোস্ক্রপের প্রয়োগ হয়েছে।
কিন্তু সর্বশেষ গবেষণার ফলস্বরূপ আরো নতুন কিছু তথ্য বের হয়েছে। বইটিতে সর্বমোট ২০০টি পৃষ্টা আছে যা প্রতিটি পৃষ্টের প্রতিটি শব্দ এমন ভাবে লেখা হয়েছে যা কোনোরকম ভুলভ্রান্তি কাটাকাটি ছাড়া। পৃষ্টাগুলি পশুর চামড়ার দ্বারা বানানো, লেখায় ব্যাবহৃত রং খুব পুরোনো সময়কালের। পৃষ্টার কার্বন ডেটিং থেকে পায় যায় বইটি ১৫ শতাব্দীতে তৈয়ারি।
সূএ ইন্টারনেট