মহাস্থানগড় দানবক্সের টাকা গুনতে দুই দিন লাগবে!

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে হযরত শাহ্‌ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.) মাজারের সিন্দুকে দান হিসেবে পাওয়া অর্থ গুনছে শিক্ষার্থীরা- সমকাল

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে হযরত শাহ্‌ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.) মাজারের সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে গণনা করা হচ্ছে এসব সিন্দুকে দান হিসেবে পাওয়া অর্থ। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ হওয়ায় তা গুনতে ১৪ জন স্কুলছাত্রের দুই দিন লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন মাজার কমিটির কর্মকর্তারা।

মাজার কমিটি জানিয়েছে, রোববার সকালে মাজারের চারদিকে থাকা ৯টি সিন্দুকের মধ্যে ৬টি খোলা হয়েছে। বাকি তিনটি সিন্দুকের মধ্যে দু’টি সোমবার খোলা হবে।

কথিত আছে শাহ্‌ সুলতান মাহমুদ বলখী মধ্য এশিয়ার বল্লখ রাজ্যের সম্রাট ছিলেন। ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি রাজত্ব ছেড়ে প্রায় ৭০০ বছর আগে পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুণ্ড্রনগর তথা আজকের বগুড়ার মহাস্থানে আসেন। মহাস্থানগড়ে পৌঁছে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। ধর্ম প্রচার নিয়েই পুণ্ড্রবর্ধনের তৎকালীন রাজা পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। ১৩৪৩ সালে তিনি পরশুরামকে পরাজিত করেন। পরে শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী মৃত্যুবরণ করলে তার মাজার নির্মিত হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার সেই মাজারে ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তার কবর জিয়ারত করলে পুণ্য হবে মনে করে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ সেখানে যান। তারা মাজারের চারদিকে রাখা সিন্দুকগুলোতে অর্থও দান করেন।

মাজার কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানান, মাজার কমিটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন মাস পর পর জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাজারের সিন্দুকগুলো খোলা এবং টাকা-পয়সা গণনা করা হয়। বিপুল পরিমাণ টাকার মধ্য থেকে বিভিন্ন নোট বাছাইয়ের কাজে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নেওয়া হয়। এজন্য তাদের প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। এছাড়া নোটগুলো গণনা করে বাণ্ডিল তৈরির জন্য স্থানীয় রূপালী ব্যাংকের কর্মচারীদের সহায়তা নেওয়া হয়। তাদের দৈনিক ৫০০ টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।

তিনি জানান, মাজারের টাকা গুণতে কমপক্ষে দুই দিন লাগে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর সিন্দুক খুলে মোট ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া গেছে। তার হিসাব মতে, ২০১৮ সালের ১১ মে থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে ৮৭ লাখ ৫৫ হাজার ১০৩ টাকা পাওয়া গেছে।

মাজার কমিটির নামে এখন ব্যাংকে প্রায় ৩ কোটি টাকা রয়েছে জানিয়ে জাহেদুর রমহমান বলেন, ‘এই টাকা শুধু মাজারের উন্নয়নেই ব্যয় করা হয়। পাশাপাশি মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনসহ যে ৩৬জন কর্মচারীর বেতন-ভাতাও সিন্দুকে পাওয়া টাকা থেকে শোধ করা হয়।’

এবার টাকা বাছাই করছে মাজারের পাশের মহাস্থান উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ১৪ শিক্ষার্থী। তাদের একজন শফিকুল ইসলাম বলে, এক সঙ্গে এত টাকা আগে কখনো দেখিনি। মাজারের টাকা বাছাই করতে ভালই লাগে।গণনাকালে উপস্থিত রূপালী ব্যাংক মহাস্থান শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন জানান, মাজার কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে টাকাগুলো গণনার জন্য ৭ জন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গণনা শেষে টাকাগুলো মাজার কমিটির হিসাবে জমা করা হয়। গণনা তদারকিতে নিয়োজিত বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজ উদ্দিন জানান, ১৯৮৭ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মাজার কমিটি পরিচালিত হচ্ছে। পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক এই কমিটির সভাপতি।

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.