বসায় বিপত্তি অনবরত বসে থাকা মারাত্মক ক্ষতি
শিরোনাম পড়ে চমকে গিয়েছেন তো? সঙ্গে সঙ্গে হিসেব কষতে শুরু করেছেন নিশ্চয়ই, যে আপনি দিনে কত ঘণ্টা চেয়ারের বসে অফিসের কাজ করেন ৷ এই সমস্যা শুধু আপনার নয়, বরং গোটা দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষেরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিনে প্রায় ১১ ঘণ্টা বা তারও বেশি কাজ করেন ৷ আর এর থেকেই নাকি আসতে পারে ভীষণ বিপদ ৷ এমনটাই মনে করছেন দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা ৷
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ১৯৯২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় ১০০০০০ জন মানুষের অকালে প্রাণ গেছে শুধুমাত্র তারা প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার বেশি সময় বসে সময় পার করত বলে। শারীরিক ব্যায়ামের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কম বয়সে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছেন এমন বহু তরুণরা।
ব্রিটিশ স্পোর্টস মেডিসিন জার্নালের একজন সম্পাদক বলেন, ‘ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া হয়ে থাকে না। ফলত স্থূলতা বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত গ্লুকোজ, ডায়বেটিস, হজমক্রিয়ায় সমস্যা, বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ক্যান্সার এমনকি মাতৃজনিত বিভিন্ন রোগের সঞ্চার হয়ে থাকে।
আইটি প্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ ঃ
দৈনন্দিন কাজের চাপের কারণে আমাদের দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করতে হয়। আর যারা আইটি সম্পর্কিত কাজ করেন কিংবা যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের সাথে জড়িত, তাদেরতো ঘন্টার ঘন্টা বসে থাকতে হয়, সারাদিনই হয়তো কেটে যায়, পিসির সামনে। এর ফলে বেশকিছু ভয়ঙ্কর সমস্যা দেহে বাসা বাঁধতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা গবেষণায় দেখেছেন, বহু সময় চেয়ারে বসে পার করে দেওয়ার কারণে আমাদের চৌদ্দ রকমের জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
১. অল্প শক্তিক্ষয়
দীর্ঘক্ষণ টেবিলে বসে কাটানোতে শারীরিক কাজ কম হয়। এতে শক্তির ক্ষয় হয় না। ফলে অলসতা অভ্যাসে পরিণত হয়।
২. ধীর বিপাক প্রক্রিয়া
দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে কাটানোয় ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯৭ জন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে গেছে, এক গবেষণায় দেখা গেছে। দৈহিক স্থিরতার কারণে পেশীর গঠন ধীর হয় এবং মেদ ঝরার কাজটি গতিহীন হয়ে পড়ে। এতে রক্তপ্রবাহ থেকে ফ্যাট বের হয় না এবং এতে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
৩. সংকটাপন্ন অঙ্গ সঞ্চালন
বসে থাকার কারণে শ্রোণীচক্র পেছনদিকে ঘোরার প্রবণতা লাভ করে এবং এতে কটিদেশীয় ডিস্কে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। বসে থাকলে ঘাড় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে যা দেহের ভারসাম্য রক্ষায় দেহের বিভিন্ন অংশে ওজনের ভাগবাটোয়ারায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
৪. মেটাবোলিক সিনড্রোম
দিনের পর দিন শক্তিক্ষয় না করার কারণে দেহে স্থূলতা, বিপাক প্রক্রিয়ায় সমস্যা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি দেখা দেয়।
৫. পিঠের এবং মেরুদণ্ডে আঘাত
অনেক সময় ধরে বসে থাকায় টিস্যুর স্থিতিশীল অবস্থান নষ্ট করে দেয়। এতে পিঠ-কাঁধ এবং মেরুদণ্ডের পেশী ও হাড়ের সংযোগস্থলের ওপর চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর ফলে ওই সকল পেশীতে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৬. সামাজিক দক্ষতা হ্রাস
এর একটি ভিন্নমাত্রার প্রভাব রয়েছে। ডেস্কে বহু সময়ের ব্যয় অন্যান্য ক্ষেত্রে যোগাযোগের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। ফলে সামাজিক প্রাণী হিসেবে মানুষের সমাজসংশ্লিষ্ট দক্ষতা কমতে থাকে।
৭. একাকীত্ব ও বিষণ্নতা
কম্পিউটার যখন আপনার একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম হয়ে দেখা দেয়, তখন চেনা-পরিচিত মহলের গণ্ডি ছোট হয়ে আসে। এতে একাকীত্ব বোধে আক্রান্ত হয় মানুষ এবং পরিণামে বিষণ্নতা ভর করে। বাইরে বেরোনোর এবং সূর্যের আলো উপভোগের অভাবে ভিটামিন ডি এর স্বল্পতা দেখা দেয় যা বিষণ্নতার কারণ ঘটায়।
৮. ক্রনিক ব্যাথা
দীর্ঘদিন ধরে অনেক সময় চেয়ারে বসে কাটানোর ফলে মেরুদণ্ডের ব্যাথা বা কাঁধ ও পিঠের ব্যাথা জেঁকে বসে। এ সময় তা ক্রনিক ব্যাথায় পরিণত হয়।
৯. বাতরোগ
আরথ্রাইটিসের মতো বাতরোগ দেখা দিতে পারে বসে বসে সময় কাটালে।
১০. স্থূলতা
অতিরিক্ত সময় বসে থাকায় কম শক্তিক্ষয়ের কারণে দেহের বড় ধরনের পেশীগুলো কার্যহীন থাকে। এক সময় দেহের মেদ বেড়ে যায় এবং স্থূলতা দেখা দেয়।
১১. ডায়াবেটিস
বেশিক্ষণ বসে থাকলে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারায় দেহ। সেইসঙ্গে ইনসুলিন হরমোনের স্পর্শকারত পরিবর্তন আনে। এটি রক্তে গ্লুকোজ পৌঁছে দেয় তা শক্তি উৎপাদন করে।
১২. ক্যান্সার
অতি সামান্য শারীরিক কাজের কারণে ক্যান্সার হওয়ার যেসব প্রভাবক রয়েছে তাদের কার্যকর হওয়ার সুযোগ বেড়ে যায়। এ গবেষণায় দেখা যায়, মেয়েদের অলস বসে থাকার কারণে স্তন্য, কর্পাস ইউটারি এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
১৩. হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ৬৪ শতাংশ
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকির মাত্রা ৬৪ শতাংশ বেড়ে যায়।
১৪. মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর পেছনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা দায়ী। নারী-পুরুষের বয়স, ওজন, স্বাস্থ্যের নানা স্তরে শারীরিক কাজের অভাবে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
সংগ্রহেঃ হাফিজুর রাহমান