ক্লাউড কম্পিউটিং কি ?

ক্লাউড কম্পিউটিং বলতে কম্পিউটারের রিসোর্স গুলো মানে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর সার্ভিস গুলো নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে প্রদান করাকে বোঝায়।

যদি আপনার ডাটা ভিজুয়ালাইজেশনের জন্য ম্যাটল্যাব সফটওয়্যাটি দরকার কিন্তু আপনার পিসিতে তা নেই । তাই আপনি ইন্টারনেটের মধ্যমে কোন একটি সার্ভিস প্রভাইডারের কাছে ফ্রি / অর্থের বিনিময়ে কানেক্ট হবেন যা আপনাকে ম্যাটল্যাব সফটওয়্যাটির ইনভাইরনমেন্ট দেবে ব্যবহারের জন্য ।

অথবা,

আপনার ১৬/ ৩২ কোর প্রসেসরের প্রসেসিং পাওয়ার দরকার হতে পারে কোন বড় ক্যালকুলেশনের জন্য কিংবা মেশিন লার্নিং এর বড় কোন মডেল রান করার জন্য , যা আপনার / আমার মত গরিবের পক্ষে দিবাস্বপ্নের মত । কিন্তু সেই জন্য কি আমরা মেশিন লার্নিং শিখতে পারবো না ? অবশ্যই পারবো । আর এই জন্য আমরা ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে (সাধারন পিসি থেকেই) কমমূল্য দিয়েই (হয়ত ঘন্টা হিসেবে) ঐ সার্ভিস পেতে পারি নেটওয়ার্কের মাধ্যেমে কানেক্টেড থেকে ।

-এটাই হল ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাধারণ ধারণা ।

তাহলে এককথায় ক্লাউড কম্পিউটিং হলঃ ” কম্পিউটারের রিসোর্স গুলো মানে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর সার্ভিস গুলো নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে প্রদান করা ” ।

যেভাবে কাজ করেঃ

ক্লাউড সার্ভারঃ

ক্লাউড সার্ভিস প্রভাইডাররা যে সার্ভার ব্যবহার করে তাই ক্লাউড সার্ভার বলে যেখানে এসব এনভারনমেন্ট গুলো সার্ভিস হিসেবে রাখা হয় ।

ক্লাউড সার্ভার এবং ডেডিকেটেড সার্ভারের (নরমাল সার্ভার) মধ্যে পার্থক্য

1.প্রাপ্যতাঃ

ক্লাউড সার্ভারগুলি কোনও সমস্যা হলে একেবারে ডাউন হয়ে যায় না, একাধিক নোডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যর্থ নোডের ওয়্যারলোডটি ধরে নেয় এবং এটি আপনার ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনের জন্য শূন্য ডাউনটাইম এবং সর্বাধিক নেটওয়ার্ক আপটাইম নিশ্চিত করে।

ডেডিকেটেড সার্ভারগুলির সাথে, ডাউনটাইম এবং হার্ডওয়্যার ব্যর্থতার ঝুঁকি থাকে কারণ তাদের লোড ভাগ করার জন্য একাধিক নোড নেই।

2. রিসোর্স বৃদ্ধিকরণঃ

ক্লাউড সার্ভারে বরাদ্দকৃত রিসোর্স বৃদ্ধি বা হ্রাস – কম্পিউটিং কোর, র‍্যাম, এবং স্টোরেজ ও সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি খুব সহজ এবং সময় কম লাগে ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে রিসোর্স বৃদ্ধি করা কঠিন এবং সময় ব্যয়কারী টাস্ক ।

3. তথ্য সুরক্ষা নিরাপত্তাঃ

ক্লাউড সার্ভারে আপনার পরিসেবার জন্য আপনার প্রোভাইডারকে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেডিকেটেড আইটি সাপোর্ট, সুরক্ষা এবং এনক্রিপশন, ফায়ারওয়াল এবং ডেটা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ক্লাউড সার্ভিস প্রদানকারীরা তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে আপনাকে আপনার সংবেদনশীল এবং গোপনীয় ব্যবসায়িক তথ্য নিরাপদ করার জন্য আপনার ডেডিকেটেড সার্ভার আপগ্রেড করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি নিতে হবে।

4. খরচ ও কর্মদক্ষতাঃ

ক্লাউড সার্ভারে ঘন্টাভিত্তিক,রিসোর্স-ভিত্তিক বিলিং ক্লাউড সার্ভার হোস্টিং এর বড় বেনিফিটগুলির মধ্যে অন্যতম । সাধারণতঃ আপনি র‍্যাম, ব্যান্ডউইথ, এসকিউএল স্টোরেজ এবং ডিস্ক স্পেস এর ইউজ হিসাবে অর্থ প্রদান করবেন, অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র সেই কম্পিউটিং রিসোর্স গুলির জন্য অর্থ প্রদান করেন যা আপনি আসলে ব্যবহার করেন। এসব সার্ভিস একইসাথে দেওয়া বেশ ব্যয়বহুল, কিন্তু ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারেরা তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং ডেডিকেটেড সার্ভারের চেয়ে তুলনমূলক কম দামে আপনার কাছে বিক্রি করে দেয় ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে সাধারণত মাসিক বিল দেওয়া হয় এবং আপনি কতগুলি স্পেস ব্যবহার করেন তার পরিমাণ অনুসারে পরিশোধ করতে হবে এদের মুল্য তুলনামুলক ভাবে বেশি ।

5. নিয়ন্ত্রণঃ

ক্লাউড সার্ভারে ইউজারের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল নেই এবং অনেক কিছু ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার কর্তৃক প্রদত্ত ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে ইউজারের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল থাকে । যেমন একটি অ্যাপ্লিকেশন, প্রোগ্রাম এবং কর্মক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা যোগ করতে পারে ।

ইউজার এর উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং মূলত ৪ ধরনের হয়ে থাকেঃ

  • Public cloud: এক ধরনের ক্লাউড সার্ভিস যা সাধারন জনগন ব্যবহার করতে পারবে।
  • Private cloud: যেটা শুধু কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জনগন ব্যবহার করতে পারবে।
  • Hybrid cloud: এটা পাবলিক এবং প্রাইভেট দুইটার সংমিশ্রণে তৈরি।
  • Community cloud: এটা একাধিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে।

সার্ভিসের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং কে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ

  • 1. IaaS (Infrastructure-as-a-Service)
  • 2. PaaS (Platform-as-a-Service)
  • 3. SaaS (Software-as-a-Service)

নিচের ছবিটি দেখে আমরা ক্লিয়ার ধারণা পেয়ে যাবো আশা করি ।


চিত্রঃ সার্ভিসের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং উদাহরন

ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধাঃ

কম খরচঃ যেহেতু এতে আলাদা কোন সফটওয়্যার কেনার প্রয়োজন হয় না বা কোন হার্ডওয়্যার এর প্রয়োজন হয় না। তাই স্বাভাবিক ভাবে খরচ কম হবেই।

সহজে ব্যবহারঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর কাজ গুলো যেকোনো স্থানে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায় তাই এটা সহজে ব্যবহার যোগ্য।

অটো সফটওয়্যার আপডেটঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর সফটওয়্যার গুলো আপনার আপডেট করার প্রয়োজন নেই। এগুলো অটো ভাবে আপডেট হয়ে থাকে। তাই আলাদা ভাবে এটা মেইনটেন্স এর খরচ লাগে না।

যতটুকু ব্যবহার ততটুকু খরচঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এ আপনি যত টুকু ব্যবহার করবেন শুধু মাত্র ততটুকুর জন্য পয়সা আপনাকে গুনতে হবে। যেটা কিনা ডেস্কটপ কম্পিউটিং এ সম্ভব না।

ডকুমেন্ট কন্ট্রোলঃ মনে করুন কোন একটা অফিসে যদি ক্লাউড কম্পিউটিং না ব্যবহার করে তবে সেই অফিসের ডকুমেন্ট সমূহ কন্ট্রোল করতে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেবার জন্য আলাদা লোকের প্রয়োজন হবে কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটিং এ সেই ধরনের কোন সমস্যা নেই। অতিরিক্ত লোক ছারাই সকল ডকুমেন্ট কন্ট্রোল করা যায়।

সম্পূর্ণ সিকিউরঃ ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পূর্ণ সিকিউর কারন এতে আপনার ডাটা হারানোর বা নষ্ট হবার কোন চান্স থাকে না। ল্যাপটপ বা কম্পিউটার হারিয়ে যায়। হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যায় ইত্যাদি সমস্যা থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পূর্ণ মুক্ত।

অসুবিধা: এটা তেমন কিছু না কেননা সব সার্ভিস এর কিছু না কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে ক্লাউড এর কিছু অসুবিধা হচ্ছেঃ

  • আপনার তথ্য যদি ক্লাউডে রাখেন, তাহলে সেই তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। আপনি যে আপনার মহামুল্যবান তথ্য আরেক জনের হাতে তুলে দিচ্ছেন সে যে আপনার তথ্য নিয়ে গবেষণা করবে না তার কি গারান্টি আছে ?
  • তথ্য করাপ্টেড হয়ে যেয়ে পারে নিমিষে ,
  • পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নাও থাকতে পারে ।
  • তথ্য ফাঁস হবার সম্ভাবনা।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন এবং সার্ভিসঃ

Outright => Outright হল একটি ফাইনান্স অ্যাপ্লিকেশন। এটা ছোট খাটো বিজনেসের আকাউন্ট এর কাজে ব্যবহার করা হয়। বিজনেসের প্রফিট, লস, আয়, ব্যয় ইত্যাদির খরচ খুব সহজে করা যায়।

Google Apps => গুগল অ্যাপস অনেক সুবিধা দেয় যেমনঃ ডকুমেন্ট তরি করা, স্প্রেডশিড তৈরি, স্লাইড শো তৈরি, ক্যালেন্ডার মেইনটেন্স, পার্সোনাল ইমেইল ইত্যাদি তৈরি করার সুবিধা দেয়।

Evernote => প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নোট সমূহ খুব সহজে কন্ট্রোল করা, ব্যবহার করা, যেকোনো স্থানে যেই নোট সমূহ ব্যবহার করাতে Evernote খুবই উপকারি।

Quickbooks => Quickbooks এক ধরনের একাউন্ট সার্ভিস। এর মাধ্যমে ক্যাশ নিয়ন্ত্রন করা, বাজেট তৈরি, বিজনেস রিপোর্ট তৈরি ইত্যাদির কাজে খুব ভাল সাপোর্ট দেয়।

Toggl => এটি একটি টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপলিকেশন। মূলত প্রোজেক্ট কন্ট্রোল এবং টাইমিং এর জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। প্রোজেক্ট তৈরিতে কত সময় লাগলো, কোন খাতে কতটুকু সময় সকল হিসাব এর মাধ্যমে জানা যায়।

Skype => Skype কম্পিউটার কে ফোনে রূপান্তর করে ফেলেছে। বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে কম্পিউটার এর মাধ্যমে কথা বলা, ভিডিও চ্যাট করা ইত্যাদির সুবিধা দিচ্ছে।

DropBox => অনেক দরকারি একটি সার্ভিস। ভার্চুয়াল হার্ডডিস্কও বলতে পারেন। মানে আপনি যেকোনো ধরনের ফাইল রাখতে পারবেন এবং সেটা যেকোনো পিসি থেকে কন্ট্রোল করতে পারবেন খুব সহজে। অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.