জগত বিখ্যাত বিলগেটসের জীবনবৃত্তান্ত

বিল গেটস এর পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস। সাফল্য যাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে আবদ্ধ করে রাখে। অধ্যাবসায় এবং তপস্যা মানুষকে কি এনে দিতে পারে তা বিল গেটস শিখিয়েছেন আজকের তরুন প্রজন্মকে।শ্রেষ্ঠ ধনীর তকমাটা নিজের নামের সাথে মোটামুটি পাকাপোক্তভাবেই লাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। জন্ম হয়েছিল ১৯৫৫ সালের ২৮শে অক্টোবর আমেরিকার ওয়াশিংটনের সিয়াটলে। তার বাবা উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র ছিলেন একজন বিখ্যাত আইনজীবী এবং মা ম্যাক্সওয়েল গেট্স ছিলেন ইউনাইটেড ওয়ে এর ডিরেক্টর। তার স্কুল জীবন শুরু হয় ১৩ বছর বয়সে লেকসাইড স্কুল থেকে এবং তিনি সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এই সময় তিনি মোট ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালে হার্ভার্ড কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। এখানে পড়তে এসে বিভিন্ন মানুষের সান্নিধ্য লাভ করেন। স্টীভ বালমার তাদেরই একজন যে পরবর্তীতে মাইক্রোসফটের সিইও হন। হার্ভার্ড এ পড়ার সময় গেটস এর নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছিল না শিক্ষাগ্রহন বিষয়ে। কিন্তু তিনি বেশিরভাগ সময় কাটাতেন কলেজের কম্পিউটার ল্যাবে। তিনি পরবর্তীতে ১৯৭৪ এ হানিওওেল নামক একটি ক্লাবে যোগ দেন। সেই বছরই তিনি তার বন্ধু পল এলেন কে সাথে নিয়ে তৈরী করেন এম.আই.টি.এস ‘৪৪০০’ যা ইন্টেল ৮০৮০ সিপিইউতে ব্যবহার উপযোগী। এই আবিষ্কারের পরে গেটস সফটওয়ার কোম্পানী প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং হার্ভার্ড ত্যাগ করেন। মুলত তার সাফল্যের যাত্রা এখান থেকেই শুরু হয়। পরবর্তী আই.বি.এম ১৯৮০ গেটস কে আই.বি.এম পিসি এর অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে কাজ করতে অনুরোধ করেন। মাইক্রোসফট সর্বপ্রথম তাদের বানিজ্যিক সম্প্রসারন শুরু করে ১৯৮৫ সালের ২০শে নভেম্বর থেকে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর মাধ্যমে। এই সময়ও তারা আই.বি.এম এর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল এবং পরবর্তীতে ১৯৯১ এ মাইক্রোসফট কোম্পানি আই.বি.এম থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে শুরু করে। বিল গেটস মাইক্রোসফট এর সিইও ও প্রধান আর্কিটেক্ট ছিলেন। বিল গেটস ১৯৯৪ সালের ১লা জানুয়ারীতে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন সন্তানের জনক বিল গেটস বর্তমানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হিসাবে খ্যাত। বর্তমানে গেটস ৭২.৭ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার এর মালিক। তার ৩২তম জন্মদিনের আগেই ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রভাবশালীদের তালিকায় সেরা চারজনের একজন নির্বাচিত হন। এই অর্থের একটি বিশাল অঙ্কের টাকা তিনি প্রতি বছরই বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ জমা করেন পৃথিবীর দুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে।

একনজরে বিলগেটসঃ

১) নাম : উইলিয়াম হেনরি গেটস (তৃতীয়)

২) জন্ম : ২৮ অক্টোবর, ১৯৫৫

৩) জন্মস্থান : সিয়াটল, ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

৪) পিতা-মাতা : পিতা উইলিয়াম হেনরি গেটস Sr. ও মাতা মেরী ম্যাক্সওয়েল গেটস।

৫) জাতীয়তা : আমেরিকান

৬) পড়াশুনা : হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

৭) বর্তমান আবাসস্থল : মেডিনা, ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

৮) পেশা : Co-founder & Chairman of “Microsoft”, Co-chairman of the “Bill & Melinda Gates Foundation”, CEO of “Cascade Investment” & Chairman of “Corbis”

৯) পরিবার : স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস এবং তিন সন্তানকে নিয়ে তার পরিবার।

এক নজরে বিলগেটসের সেবাঃ

১। যখন তোমার পকেট ভর্তি টাকা থাকবে তখন শুধুমাত্র তুমি ভুলে যাবে যে ‘তুমি কে’; কিন্তু যখন তোমার পকেট ফাঁকা থাকবে তখন সমগ্র দুনিয়া ভুলে যাবে ‘তুমি কে’!
২। একবার পরীক্ষায় কয়েকটা বিষয়ে আমি ফেল করেছিলাম কিন্তু আমার বন্ধু সব বিষয়েই পাশ করে। এখন সে মাইক্রোসফটের একজন ইঞ্জিনিয়ার আর আমি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা।
৩। বিল গেটস বলেন- আমি এটা বিশ্বাস করি যে, আপনি যদি মানুষদের সমস্যা দেখান এবং তার সমাধানও দেখান তবে মানুষ স্থানান্তর হবে।
৪। মানুষ সবসময় পরিবর্তনে ভয় পায়। তা আমরা দেখতে পাই, যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়। তখন মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভয় পেত। তারা কয়লা এবং গ্যাস চালিত ইঞ্জিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভয় করত। যার অজ্ঞ থেকেছে তারা সব সময় নতুনকে বরন করে নিতে ভয় পেয়েছে। একটু সরাসরি বলতে গেলে, অজ্ঞতাই ভয়ের জন্ম দেয়।
৫। পুঁজিবাদ একটি বিস্ময়কর ব্যাপার যা মানুষের মাঝে প্রেরণা যোগায়। ইহার কারনে কিছু উদ্ভাধন হতে পারে, কিন্তু এ পৃথিবীর সকল এলাকার জন্য ইহা মঙ্গল জনক নয়।
৬। আগামি দিন গুলোতে ইন্টারনেট হবে সারা পৃথিবীর জন্য টাউন স্কয়ার।
৭। সরকার মানুষের জন্য নীতি তৈরি করে এবং তারা মানুষদের সম্পদ প্রদান করে থাকে যাদের তা প্রয়োজন। তারা গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে থাকে, যা দ্ধারা নতুন কোন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের জীবন মান উন্নত করতে পারে।
৮। সফলতা উৎযাপন করা ভালো তবে ব্যর্থতার দিকেও নজর দিতে হবে।
৯। আপনি যদি কোন কিছু ভালো ভাবে করতে না পারেন অন্তত চেষ্টা করুন।
১০। আমাদের এমন কিছু মানুষ প্রয়োজন যারা আমাদেরকে তাদের মতামত জানাবে, এভাবেই আমরা উন্নতি করতে পারব। ১১। সবচেয়ে অসুখী মানুষের প্রতি লক্ষ্য করুণ, অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
১২। যদি আপনি গরীব হয়ে জন্মগ্রহণ করেন, সেটি আপনার দোষ নয়। কিন্তু যদি আপনি গরীব হয়ে মারা যান, তাহলে সেটি আপনার দোষ।

বিলগেটসের সম্পদের খবরঃ

ঠিক এ মুহূর্তে বিল গেটস যদি আর কিছুই না করেন, বসে বসে খান তবে তার অর্থভাণ্ডার ফুরাতে ২১৮ বছর লাগবে। এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান এমনটাই দাবি করে। যেখানে বলা হয়, তিনি যদি প্রতিদিন ১০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেন তবে তার সম্পদ শেষ হতে ২১৮ বছর লেগে যাবে। শুধু মুনাফা থেকেই বিল গেটস প্রতিদিন আয় করেন ১১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনেকের মনেই প্রশ্ন, এত সম্পদের উত্তরাধিকার কারা, এত সম্পদ কী করবেন বিল গেটস?

সম্পদ পাচ্ছে না পরিবারের কেউ

ধনকুবের বিল গেটস। তার সঞ্চিত ধন-সম্পত্তির মূল্য ৮৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের সেরা ধনীদের মধ্যে সেরা তিনি। এ পরিচয়েই তাকে চেনে বিশ্ববাসী। পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস। তার জন্ম ২৮ অক্টোবর, ১৯৫৫। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরে। তিনি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধান সফটওয়্যার নির্মাতা এবং সাবেক সিইও। বিল গেটস উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র। বিল গেটস বিয়ে করেন ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি। স্ত্রীর নাম মেলিন্ডা গেটস। ফোর্বসের প্রতিবেদন বলছে, প্রতি বছরই বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। সব সময়ই বিল গেটস পৃথিবীর বিখ্যাত শীর্ষ ধনীর তালিকায় উপরে অবস্থান করেন। তার অর্থ-বিত্তের পরিমাণ এতই বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিল গেটস যদি একটি দেশ হতেন তাহলে তিনি পৃথিবীর ৩৭তম ধনী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতেন। ইউভার্সিটিতে পড়ার সময় বিল গেটস তার ইউনিভার্সিটির এক টিচারকে তার নিজের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন তার যখন ৩০ বছর হবে তখন তিনি মিলিয়নার হবেন কিন্তু তিনি বিলিয়নার হন বয়স ৩১ হওয়ার আগেই। তার ধনী হওয়ার রহস্য কী? তার উত্তরে তার সহজ জবাব, আমাদের জন্য সফলতার প্রথম মূলমন্ত্র হলো, সব সময় খুব চৌকস ব্যক্তিদের কাজে নিয়ে আসুন। আমরা যদি উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করে পূর্ণগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে না পারি, তাহলে পেছনে পড়ে থাকাটাই হবে অনিবার্য পরিণতি। বদৌলতে কোম্পানিও বড় জোর মাঝারি বা নয় ভালো, নয় খারাপ অবস্থায়ই থেকে যাবে। আমি কঠিন কাজের জন্য একজন অলস ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করি। কারণ, একজন অলস ব্যক্তিই কাজটি সম্পন্ন করার সহজ উপায় খুঁজে পান।

সব সম্পদ দান করছেন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে

বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। কিন্তু নিজ চেষ্টায় অর্জন করেন এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ। সন্তানদের জন্য এই অর্থ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বরং বিল গেটসের প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে সব সম্পদ দান করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে গেটস দম্পতি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তি। বিল গেটসের ব্যক্তিগত সম্পদ মূলত এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই ব্যয় করা হয়। গোটা বিশ্বের বিভিন্ন সংকটের সময় এই ফাউন্ডেশন থেকেই অর্থ দান করে থাকেন। ২০১২ সালে বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ১৯০ কোটি ডলার দান করেন এ দম্পতি। বিশ্বব্যাপী মানুষকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দাতব্য সংস্থা হিসেবে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন সুপরিচিত। মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করাসহ জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি। গেটস পরিবার গত কয়েক বছরে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দাতব্য কাজে ব্যয় করেছেন। বর্তমানে বিল গেটসের বিভিন্ন রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ রয়েছে এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেলওয়ে, অটোনেশন ইনকরপোরেশন, রিপাবলিক সার্ভিস ইনকরপোরেশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের শেয়ার রয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়েই গেটসের দাতব্য খরচ উঠে আসে। তবে বিল গেটস তার দাতব্যপ্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে ৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন। ১৯৯৪ সালে বিল গেটস ও তার স্ত্রী ‘বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।

একনজরে আবিষ্কারঃ

-১৯৯০তে Windows 3.0
-১৯৯৫তে Windows 95
-১৯৯৮ তে Windows 98
-১৯৯৯ তে Windows 2000, Office 2000, ও Windows ME
-২০০০ তে Microsoft C# ভাষা ও Microsft.net এর উদ্ভব।
– ২০০১ তে Windows Xp প্রচলন
-২০০৫ তে Windows Xp Media Centre 2005 এবং Xbox 360 প্রচলন।
-২০০৬ তে Windows Vista এর প্রচলন
-২০০৭ তে Microsoft word 2007 এর প্রচলন।
-২০০৮ তে Microsoft Windows server 2008 এর সূচনা
-২০০৯ তে Windows 7 এর সূচনা

উৎসসমূহঃ

বিল গেটস এর সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং তার অসাধারণ কিছু উক্তি !!!

http://www.bd-pratidin.com/various/2016/12/22/193995

http://tutorialbd.com/blog/ p / 12078

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.