নারী ও পুরুষের সতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা পর্বঃ ০২

মহান আল্লাহ নারীকে আয়াতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের সামনে আসার এবং সাজসজ্জা প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন। এরা ছাড়া বাকিদের সামনে সাজসজ্জা প্রকাশ করা যাবে না। সেই ব্যক্তিরা হলেন:

১) স্বামী ২) বাবা ৩) স্বামীর বাবা ৪) নিজের ছেলে ৫) স্বামীর ছেলে ৬) ভাই ৭) ভাইয়ের ছেলে ৮) বোনের ছেলে ৯) নিজের মেলামেশার মেয়েদের ১০) নিজের মালিকানাধীনদের ১১) অধীনস্থ পুরুষদের যাদের অন্য কোন রকমের উদ্দেশ্য নেই ১২) এমন শিশুদের সামনে ছাড়া যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ।

এই আত্মীয়দের বর্ণনা আরো বিস্তারিত জানার জন্য তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে পড়ে নিতে পারেন।

সাজসজ্জা বা আভরণ বলতে এখানে অলংকার ও আকর্ষণীয় পোশাক হতে পারে। আবার কেউ কেউ কসমেটিক্স দিয়ে অতিরিক্ত সাজ নেয়াকে বলেছেন।


তাই নারী সাধারণত যেখানে অলংকার পরে-যেমন হাতের আংটি, গলার হার, কানের দুল, পায়ের নূপুর ইত্যাদি শুধুমাত্র উক্ত (মুহরিম) ব্যক্তিদের সামনেই দেখাতে পারে।

এদের সামনে কাজের প্রয়োজনে হাতের কাপড় বা পায়ের দিকের কাপড় কিছুটা গুটিয়ে নিতে পারবে।
এখানে আপন চাচা বা মামার কথা আসেনি যদিও তারা মুহরিম ব্যক্তি, তাই উনাদের সামনে আসতে হলে সতর পুরোপুরি ঢেকে রেখে আসতে হবে (মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে শুধুমাত্র মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জী থেকে আঙ্গুল বের করে রাখতে পারবে)।

আরো অন্যান্য মুহরিম আত্মীয় যাদের সাথে বিয়ে হারাম তাদের সামনে যাওয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান।

বিভিন্ন আত্মীয়ের ব্যাপারে তাদের আত্মীয়তা, বয়স, পারিবারিক সম্পর্ক ও সম্বন্ধ এবং উভয়পক্ষের অবস্থা-যেমন এক গৃহে বা আলাদা বাস করা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে অবশ্যই বিভিন্ন হবে।
যেসব আত্মীয়ের সাথে বিয়ে চিরন্তন হারামের সম্পর্ক নয়, আবার মুহরিম আত্মীয়ও না, এক্ষেত্রেও মেয়েরা নিঃসংকোচে সাজসজ্জা করে তাদের সামনে আসবে না আবার অনাত্মীয় অপরিচিত (গায়ের মুহরিম) ব্যক্তির মতো পূর্ণ হিজাবের শর্তও থাকবে না।


এর মাঝামাঝি অবস্থার আলোকে নিতে হবে। সুতরাং, বিয়ে হারাম এবং সামনে সাজসজ্জা প্রকাশ করতে পারবে – মুহরিম ব্যক্তি যা সুরা নূর-এর ৩১নং আয়াতে বলা আছে। বিয়ে হারাম কিন্তু সতর ঢেকে রাখবে পুরোপুরি, সাজসজ্জা প্রকাশ করবে না- চাচা, মামা। বিয়ে হারাম যাদের সাথে তাদের তালিকা সূরা আন-নিসাতে (২৩ নং আয়াত) এসেছে:

১) তোমাদের মা ২) তোমাদের মেয়ে ৩) বোন ৪) ফুফু ৫) খালা ৬) ভাই ঝি ৭) বোন ঝি ৮) দুধ মা ৯) দুধ বোন ১০) তোমাদের স্ত্রীদের মা ১১) স্ত্রীদের মেয়েরা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে তার মেয়েরা ১২) পুত্রদের স্ত্রীরা ১৩) একই সাথে দুই বোন ১৪) অন্য কারো বিবাহাধীন নারী।

রাসূল সা: বলেছেন: যে নারী আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য এ পরিমানের বেশী খোলা রাখা জায়েয নয় একথা বলে তিনি তাঁর কব্জীর উপর এমনভাবে হাত রাখলেন যে, কব্জীর মধ্যস্থল এবং তাঁর হাত রাখার স্থানের মধ্যে মাত্র একমুষ্ঠী পরিমান জায়গা অবশিষ্ট রইল। আবু দাউদ

এক্ষেত্রে মুহরিম পুরুষ আত্মীয়দেরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে, যে নারীরা (মুহরিম) তাদের সামনে সতর খোলা ও সাজসজ্জা করে আসতে পারে না, তারা যদি সামনে চলে আসে, তবে অবশ্যই মুহরিম ব্যক্তির নিজেদের দৃষ্টি ফিরিয়ে বা সংযত রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা সমাজে পবিত্রতা রক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা দিয়েছেন। কিন্তু দেখা যায় সমাজে সাবালিকা মেয়েরা তাদের চাচা, মামা বা মুহরিম (যাদের সামনে সাজসজ্জা দেখানো যাবে না) আত্মীয়ের সামনে ওড়না ছাড়া চলে যায় তো বটেই, অতিরিক্ত মাখামাখিও করে, যা শরীয়ত সম্মত নয়। অনেকে টিভি, ভিসিডি, কম্পিউটারে অশ্লীল পোশাক পড়া নারীদের গান-নাচ-ছবি দেখে চোখের যিনা করে থাকেন। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের পরিবার ও সমাজকে এইসব অপবিত্রতা থেকে হেফাজত করুন।


‘খুমুরুন’ শব্দটি ‘খিমার’ শব্দের বহুবচন। খিমার বলতে সেই কাপড় বুঝায় যা দিয়ে নারী তার মাথা বক্ষ ও গলা ঢেকে রাখতে পারে।

জাহেলী যুগে মহিলারা মাথায় একধরনের আটঁসাটঁ বাঁধন দিতো। মাথার পেছনে চুলের খোঁপার সাথে এর গিঁরো বাঁধা থাকতো। সামনের দিকে বুকের একটি অংশ খোলা থাকতো। সেখানে গলা ও বুকের ওপরের দিকের অংশটি পরিষ্কার দেখা যেতো। বুকে জামা ছাড়া আর কিছুই থাকতো না। এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর ওড়নার প্রচলন করা হয় যা শরীরে জড়িয়ে মাথা, কোমর, বুক ইত্যাদি সব ভালোভাবে ঢেকে রাখতো।

নারী ঘরে যে পোশাক পরবে অবশ্যই তার সাথে খিমার বা ওড়না বা দোপাট্টা দিয়ে বুক ঢেকে রাখবে। কোন অবস্থাতেই ওড়না ছাড়া মুহরিম ব্যক্তির সামনে (উল্লেখিত আয়াতে সম্পর্ক বলা) আসতে পারবে না (স্বামী ব্যতিক্রম)

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.