ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং পেশা শুরু হোক আজ থেকেই

আমার পরিচিত অনেকেই আছেন যাঁরা আমার আগে, আমার সমসাময়িক বা আমার পরে এসেছেন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংকে পেশা হিসেবে নেবার জন্য কিন্তু কিছুদিন পর আবার সব ছেড়ে ছুড়ে চাকরী খুঁজতে বেরিয়েছেন। এ ধরণের ঘটনা দেখার পর হয়ত অনেকেই মনে করতে পারেন যে ফ্রিল্যান্সিং হয়ত পেশা হতে পারেনা। এটি অনেকে সাময়িকভাবে টিকে থাকার জন্য করে থাকেন।

আর এ কারণেই শুনতে হয়, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং কি ক্যারিয়ার হতে পারে? আমার পাল্টা প্রশ্ন থাকে, কেন পারে না? অবশ্যই পারে! শুধু পারেই না, এটা ক্যারিয়ার হিসাবে সবার প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।

যাঁরা ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংকে পেশা হিসাবে নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এক্ষেত্রে এসেও পরে চাকুরির পিছনে ছুটেছেন তাঁদের ব্যাপারে আমার মতামত, চ্যালেঞ্জবিহীন জীবনের জন্যই তাঁদের পিছু হটা, প্রতিদিন ৯-৫ টার ধরা বাঁধা অফিস টাইম মেইনটেইন করার জন্যই তাঁদের চলে যাওয়া।

কেন ফ্রিল্যান্সিং সেরা পেশা

ব্যক্তিজীবন, পরিবার আর পেশাজীবনের সবচেয়ে ভাল সমন্বয়কেই ভাল থাকা বলে মনে করি আমি। এই ভাল থাকার জন্য প্রধানত যে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন তা হচ্ছে- স্বাধীনতা, স্বাচ্ছন্দ এবং পর্যাপ্ত আয়। চলুন দেখি ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সুবিধা এ ক্ষেত্রগুলোতে পেতে পারি।

সময়ের স্বাধীনতা

আমি প্রতিদিন কাজ করি রাত এগারোটা থেকে সকাল ছয়টা, দুপুর পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজ করে দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘুমাই। এভাবে কাজ করতে আমাকে কেউ বাধ্য করেনি। আমার কাছে এই শিডিউলটা সুবিধাজনক মনে হয় তাই এভাবে করি। কোনদিন ইচ্ছা হলো আজ রাতে কাজ করবো না, অন্য সময়ে করবো, তাতেও কেউ নিষেধ করবে না। কিন্তু আগের ৯ বছরের কর্মজীবেন আমি কখনো ভাবতে পারিনি অফিসে বস্কে বলবো আজ আমি সকালে অফিসে না গিয়ে সন্ধ্যায় যাব বা দুদিন অফিসে না গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো!

স্থান স্বাধীনতা

আমার পার্সোনাল ডেস্কটা আমার বেডরুমেই। আপনি কোন চাকরি করেন কিংবা অন্য কোন ব্যবসা করেন, বেড়াতে ইচ্ছা হলেই যেতে পারবেন না। যদি চাকরি হয় তাহলে ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে, ব্যবসা হলে আপনার প্রতিষ্ঠান ফেলে যেতে হবে। কিন্তু ভ্যাগাবন্ডফ্যামিলি লিংকে গিয়ে দেখুন। এরকম ভ্যাগাবন্ড ফ্যামিলি তৈরি তো দূরের কথা, এমন কিছু স্বপ্ন দেখতেও দ্বিধা হবে! এরা সবাই বছরের পর বছর দেশে বিদেশে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এদের কাজ থেমে থাকে না। এরা যেখানে যায় এদের অফিসও সেখানে। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার ল্যাপটপ আর একটা ছোট্ট ট্রাভেল ব্যাগই যথেষ্ট। আপনাকে অফিসে যেতে হবে না, বরং অফিসই আপনার সাথে যাবে। কাজের জন্য আর কতটা  স্বাধীনতা চান?

বিশ্বব্যাপী ব্যবসা

লোকাল বিজনেসের সাথে এটার সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে, এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসাক্ষেত্র বিশ্বব্যাপি। ফলে গ্রাহকসংখ্যা বহুগুণ বেশি। এজন্য কাজেরও কোন অভাব নেই। এখানে আপনি সার্ভিস প্রোভাইডার এবং আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে আপনার সার্ভিস প্রোভাইড করবেন আর কাকে করবেন না। ধরা যাক, আপনি কোন একটা শহরে একটা দোকান দিয়েছেন। ব্যবসা বেশ ভালই চলছে, কিন্তু আপনার শহরে হঠাৎ কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে হয়তো বেশ কিছুদিনের জন্য আপনার ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসা শুধু আপনার শহরকেন্দ্রিক নয়, তাই ঝুঁকিও কম। যেমন- আমার একজন ক্লায়েন্ট নিউ জার্সিতে থাকেন। কিছুদিন আগে হ্যারিকেন স্যান্ডিতে তাঁর এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় তাঁর কাজও হুট করে কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার অন্যান্য শহরের বা অন্যান্য দেশের ক্লায়েন্টদের কাজ ঠিকই চলেছে।

বেশি আয়

আপনি কতটা আয় করতে চান? কথাটা আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হবে। যেখানে দেশে সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর শেষ করার পরও কয়েক লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয় একটা চাকরির আশায়, তারপরও চাকরিটা হবে কিনা এটার নিশ্চয়তা আপনাকে কেউ দিতে পারে না। সেখানে উল্টো কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে কোন ঘুষ ছাড়াই নিজের যোগ্যতায় প্রতি মাসে কি পরিমাণ আয় করতে চান! তাহলে হাসি আসতেই পারে। কিন্তু কথাটা মোটেও হাসির নয়। আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতার উপরেই নির্ভর করবে কতটা আয় করবেন। আর আপনি যখন আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করবেন, স্বাভাবিকভাবেই কাজের দাম স্থানীয় বাজারের চাইতে কয়েকগুণ বেশি হবে। ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্র অনেক বিশাল। সেখান থেকে বেছে নিন আপনার জন্য কোনটা সবচেয়ে উপযুক্ত। পেশা হিসাবে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংকে বেছে নিয়ে আমি যেমন ভালো আছি, আশা করছি আপনাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না

আশা করি বুঝতে পারছেন ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার জীবন কত সফল ফ্রিল্যান্স আউটর্সোসিং। নিজের যোগ্যতায় প্রমাণ করার বিশাল সুযোগ বাড়তি আয়ের বা নিচের চাহিদা পরিমান আয়তো থাকছে। সুতরাং আজ থেকেই শুরু হোক দক্ষতা অর্জনের শিক্ষা মনে রাখবেন আপনি কাজে যত বেশি দক্ষ এবং কৌশলী হবেন তত পরিধী বাড়েই যাবে। আপনি কাজ খোঁজা লাগবে না কাজই আপনাকে খুঁজবে।

ভাল থাকবেন সবাই এবং দেশ ও জাতিকে ভাল রাখবেন সব সময়। কে কি করলো সেটার দিকে না তাকিয়ে নিজে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ

You may also like...

1 Response

  1. Nuruzzaman বলেছেন:

    রাত না জেগে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় কি?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.