ভ্রমণের দিকনির্দেশনাঃ সাজেক ভ্যালী

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের এক অনন্য আঁধার আমাদের এ দেশ। আমরা বিভিন্ন দেশের গ্রীন ভ্যালি দেখতে যাই বা দেখার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু আমাদের দেশেও আছে তেমনই এক অপরূপা গ্রীন ভ্যালি, যার নাম সাজেক। সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে যে কয়েকটি ভ্রমণ গন্তব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে এটি অন্যতম।
ঢাকা থেকে মাত্র ৮/৯ ঘণ্টা দূরত্বে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার সাজেক ভ্যালির অবস্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। হাতে দুই দিন সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এ সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য, যা আপনার কল্পনায় গেঁথে থাকবে অনেক অনেক দিন।
খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয়। পরে পড়বে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প। যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে। তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে। পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার। বাজার পার হলেই সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়ার দেখা মিলবে, যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই। এছাড়া পাংখোয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে। ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়। এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই।
রুইলুই পাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক। সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প। এখানে হেলিপ্যাড আছে। সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া, এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই। কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে। সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এরপর আর কোনো ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না।

ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন। একদিনে এই সবগুলো দেখতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে পড়বেন। খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরায় ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ভুলবেন না। খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন। ভাড়া নিবে ৬০০০-৭০০০ টাকা। এক গাড়িতে ১৩ জন বসতে পারবেন। লোক সংখ্যা কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন, ভাড়া ৩০০০টাকা।

বর্ষা, শরৎ এবং হেমন্ত সাধারণত এই তিন ঋতুতে মেঘের লুকোচুরি দেখতে পর্যটকদের বেশি সমাগম ঘটে। পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সাজেক ভ্যালিতে থাকার ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে বেশকিছু রিসোর্ট। যেখানে নিশ্চিন্তে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে থাকতে পারবেন।

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.