যে কাজ গুলো করলে ১০০% সফল ক্যারিয়ার জীবনে

আমরা প্রত্যেকে আমাদের ক্যারিয়ার জীবনে সফল হতে চাই। কিন্তু কিছু নেতিবাচক চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সফল ক্যারিয়ার গঠনে বাধা সৃষ্টি করে। কী কী নেতিবাচকতা আমাদের মধ্যে কাজ করে তার কিছু প্র্যাকটিকেল দিক নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো। যেমন:

কী কাজ করবো তা বুঝতে না পারা কিংবা সঠিক পেশা নির্ধারণ করতে না পারা :

সঠিক প্রফেশন নির্ধারণ করা অর্থাৎ কোন্ পেশাতে যাবো সহজে বুঝতে না পারা। মা বলছে এই হও, বাবা বলছে এই করো, চাচা বলছে ওখানে যাও, সবকিছু মিলিয়ে দিশেহারা। যদিও বা কোনো পেশা মনে মনে ঠিক করি কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে নানা কারণে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি না। আবার অনেকে মনে করেন, সরকারি চাকরির নিশ্চিত ভবিষ্যৎ আছে। চাকরি যাবে না সহজে, আইডেন্টিটি আছে। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিতে টাকা বেশি কিন্তু ঝুঁকিও বেশি। কী করবো দ্বিধাগ্রস্ত।

 

এটা আমাদের তরুণদের একটা মৌলিক সমস্যা যে, সে চাকরি এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা খোঁজে। এই নিশ্চয়তা বলতে অনেক সময় আর্থিক নিশ্চয়তা বুঝি। এই আর্থিক নিশ্চয়তার জন্যে অনেক সময় আমরা দুর্নীতি করতে পিছপা হই না। কিন্তু এতে আমাদের মানসিক নিশ্চয়তা থাকবে না। আর এই যে দুর্নীতি করে অর্থ করলাম ডাক্তারের পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সব অর্থ শেষ হয়ে যাবে। আর নিশ্চয়তা বলতে যেটা বোঝায় জীবনেরই তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। জীবনটাই তো অনিশ্চিত এবং গাড়ি-বাড়ি কাউকেই কোনো কালে নিশ্চয়তা দিতে পারে নি। কারণ মানসিক অস্থিরতা যদি থাকে, মানসিক অশান্তি যদি থাকে তাহলে গাড়ি-বাড়ি কখনো নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

আসলে প্রত্যেক পেশার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক করতে হবে। আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে যে ‘আমি কী পারি, আমি কোন কাজটা করে আনন্দ পাই’। নিজের ভালো লাগাকে দেখতে হবে।

প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়ি তাই ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব না :

আসলে প্রাইভেটে পড়া বা না পড়ার ওপর আপনার কর্মক্ষেত্রের সফলতা নির্ভর করে না। নির্ভর করে আপনার দক্ষতা, আপনার চেষ্টা ও আগ্রহের ওপর। ’৬০ এর দশকে মেডিকেলে কেউ ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেলে অন্য জায়গায় পড়তো কিন্তু ডেন্টালে পড়তো না। লজ্জা পেত, তেমন পসার নেই। সবাই বলবে দাঁতের ডাক্তার। অথচ এখন ডেন্টাল ডাক্তারের উপার্জন অনেক বেশি। বিদেশে ডেন্টাল সার্জনের ভিজিট সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ পাছে লোকে কিছু বলে। ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে যাতে কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে পারেন।

ছোট চাকরি করলে সম্মান থাকবে না, লোককে মুখ দেখাবো কী করে :

একটা কথা মনে রাখতে হবে সম্মান কিন্তু অন্যের ওপরে নির্ভর করে না, সম্মান সবসময় নির্ভর করে যে আমি আমার পেশাটাকে সম্মান করি কি না। আমি যদি আমার পেশাকে সম্মান করি অন্যরা সম্মান করবে। আমি যদি আমার পেশাকে সম্মান না করি, অন্যরা সম্মান করবে না।

আসলে আমাদের সমস্যাটা হলো সবসময় দোদুল্যমানতা। ‘কী করবো বুঝতে পারছি না’। এটা করবো, না ওটা করবো। লক্ষ্য হচ্ছে কত তাড়াতাড়ি আমি গাড়ি-বাড়ি করতে পারবো। আসলে এই যে তাড়াতাড়ি গাড়ি-বাড়ি, সবকিছুরই একটা সময় আছে। সেই সময় পর্যন্ত যিনি অপেক্ষা করতে পারেন, তার জীবনে টেনশন থাকে না এবং সেই সময় পর্যন্ত যিনি অপেক্ষা করতে পারেন না, তার জীবনেরই হচ্ছে সমস্যা। আর বর্তমান চাকরিতে যদি উন্নতির কোনো সম্ভাবনা না থাকে এবং যদি আমি মনে করি আমার চাকরি পরিবর্তন অত্যাবশ্যক তাহলে যত দ্রুত পরিবর্তন করা যায় তত ভালো।

টাকা নেই কীভাবে ব্যবসা করবো :

ব্যবসার ব্যাপারে আজকাল একটা ফ্যাশন আছে যে, কিছুদিন চাকরি করে টাকা পয়সা জমিয়ে তারপর ব্যবসা করবো কিংবা বিদেশ থেকে টাকা নিয়ে এসে ব্যবসা করবো। এদের ৯৮% ধরা খেয়ে যায়। কারণ তার তো ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নেই।  ব্যবসায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা বের করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। প্রতিটি ব্যবসার একটা নিজস্ব রহস্য আছে, গোমর আছে। প্রতিটি ব্যবসায় একটা ফাঁক আছে। এই ফাঁককে যিনি বুঝতে পারবেন তিনি ব্যবসা করতে পারবেন। এই ফাঁক না বুঝলে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। জিনিস কিনলাম আর বিক্রি করলাম এটি ব্যবসা নয়। ব্যবসা না বুঝলে ব্যবসা করা কঠিন। আর ব্যবসা যদি শুরু করতে হয় একেবারে গ্রাসরুট থেকে শুরু করতে হবে। গ্রাসরুট থেকে যিনি শুরু করেন তিনিই প্রতিষ্ঠিত হন। জহুরুল ইসলাম – ইসলাম গ্র“প। জহুরুল ইসলাম একটা কনস্ট্রাকশন ফার্মের সুপারভাইজার ছিলেন। সেই সুপারভাইজার থেকে ধনকুবের। চট্টগ্রামের এ.কে.খান ১৯৪৩-৪৪ এ শুধু একজন কন্ট্রাক্টর ছিলেন এবং ছোট মাপের কন্ট্রাক্টর ছিলেন। সেখান থেকে কী হলেন তখনকার পাকিস্তানের ২২টি ধনী পরিবারে একটি বাঙালি পরিবার ছিলো এ. কে. খান।

বর্তমানে পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের মধ্যে ২ নাম্বারে ওয়ারেন বাফেট-এর জীবন দেখেন, তিনি পেশাজীবন শুরু করেছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে মুদি দোকানের কর্মচারী হিসেবে। ১৪ বছর বয়সে মাত্র ২৫ ডলার নিয়ে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি ডলার। আমাদের দেশের টাকায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অতএব জীবনে যারা ব্যবসা করেছেন ছোট থেকে করেছেন। ব্যবসা কখনো বড় থেকে করা যায় না। কোটি কোটি টাকা নিয়ে করা যায় না।

তোষামোদী করতে পারি না তাই উন্নতি হয় না :

দেখা গেল আপনার অফিসের যিনি বস, তিনি তোষামোদী অত্যন্ত পছন্দ করেন। যারা কম কাজ করে কিন্তু তোষামোদ করতে পারে তারাই সুবিধা বেশি পাচ্ছে। আর কাজ বেশি করে মূল্যায়ন কম পেয়ে আপনার মন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু আপনি ভাবছেন তোষামোদী করে ভালো করার দরকার নেই। আসলে আমাদের দেশের সিস্টেম এখনও পরিবর্তিত হয় নি। আর চাকরির ক্ষেত্রে সবসময় মনে রাখবেন- বস ইজ অলওয়েজ রাইট। খুব বিখ্যাত গল্প। একবার ইন্টারভিউ বোর্ডে বস্ ইন্টারভিউ নিচ্ছেন, জিজ্ঞেস করলেন ‘অবিনাশ, ইফ আই সে দিস ব্ল্যাক বোর্ড ইজ হোয়াইট বোর্ড, হোয়াইট ইউ ইউল সে?’ সে বললো, ‘হোয়াইট স্যার’ যদি বস বলে যে ‘ ইফ আই সে’ দিস হোয়াইট বোর্ড ইজ ব্ল্যাক বোর্ড, হোয়াট ইউ ইউল সে?’ ‘ব্ল্যাক বোর্ড স্যার’। যদি আপনি এটা করতে পারেন, চাকরিতে আপনাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। ঐ বস যদি চলেও যান রেকমেন্ড করে যাবেন- হি ইস দ্য মোস্ট অবিডিয়েন্ট সার্ভেন্ট এবং তার যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে তিনি আপনাকে প্রোমোট করে চলে যাবেন। তাই অযথা বিতর্কে না জড়িয়ে বসের মতামতকে মেনে নিন। আর যদি তা না পারেন হয় পিছিয়ে থাকতে হবে নইলে অন্য প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করতে হবে।

ভালো যোগাযোগ নেই তাই সুযোগ পাচ্ছি না :

পেশাতে সুযোগ আসলে কেউ দেয় না, সুযোগ করে নিতে হয়। সুযোগ করে নেয়ার জন্যে কী করতে হবে, নিজের যোগাযোগটাকে সেভাবে বাড়াতে হয়, সুযোগের জন্যে সবসময় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বা পরিচিতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অধিকাংশ নিয়োগ হয় প্রথম পরিচয়ের সূত্রে। এই পরিচিতিকে আরো বাড়াতে হবে। অর্থাৎ নিজেকে তুলে ধরতে হবে, যারা আমাকে হায়ার করতে পারে এবং সেটা তখন সম্ভব হবে যখন কাজের ক্ষেত্রে আমি আমার দক্ষতা স্ট্যাবলিশ করতে পারবো যে এই কাজের জন্যে আমি আছি। তখন সে আপনাকে হায়ার করবে তার কাজের জন্যে।

 

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.